রাজা ষষ্ঠ জর্জ মেমোরিয়াল চ্যাপেলে শায়িত হলেন রানী এলিজাবেথ

সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মৃতুর ১০ দিন পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর 2022 সালে স্বামীর পাশে শায়িত হলেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। উল্লেখ্য, গত ৮ সেপ্টেম্ব ২০২২ সালে ৯৬ বছর বয়সে ব্যালমোরাল প্রাসাদে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন ব্রিটেনের দীর্ঘতম রাজত্বকারী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।  

১৯ সেপ্টেম্ব সোমবার ২০২২ সালে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে লন্ডনের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলের ভেতরে রাজা ষষ্ঠ জর্জ মেমোরিয়াল চ্যাপেলে স্বামী প্রিন্স ফিলিপের কবরের পাশেই  সমাধিস্ত করা হয় রানিকে। উক্ত মূল অনুষ্ঠানে রাজপরিবার সহ নির্ধারিত দুই হাজার মানুষ অংশ নেন।  এছাড়াও রাজধানীর রাস্তাজুড়ে লাখো মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে রানীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবি থেকে রানীর মরদেহ নিয়ে শোক মিছিল মধ্য লন্ডনের হাইড পার্ক কর্নারে নিয়ে যাওয়া হয়। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী এই ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে। তার বিয়ে আর সিংহাসনে আরোহণ, দুই আনুষ্ঠানিকতাই সম্পন্ন হয় এখানে। তার শেষকৃত্যের মঞ্চও হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে। এরপর উইন্ডসর দুর্গে নিয়ে যাওয়া হয় রানির মরদেহ। শেষ বিদায়ে রানি যে পরিমান ভালোবাসা পেয়েছেন তা পৃথিবীর খুব অল্প মানুষই পেয়েছেন।  

রানীর শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো ও তার স্ত্রী ব্রিজিট ম্যাক্রো, জাপানের সম্রাট নারুহিতো, ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা।

রানিকে সমাহিত করার আগে টানা ১০ দিন তার প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা জানানো হয়।  আর এ সময়ে চলতে থাকে ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শেষ বিদায় জানানো। এতে   লক্ষ করা যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়। শেষকৃত্যে অংশ নিতে সেখানে হাজির হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধিরাও। সারিবদ্ধভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে প্রায় আড়াই লাখ শোকার্ত মানুষ ওয়েস্টমিনস্টার হলে রাখা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কফিনের পাশ দিয়ে হেঁটে গেছেন ও তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষযাত্রা সরাসরি দেখতে লন্ডনের রাস্তার পাশে জড়ো হওয়া হাজারো মানুষ শোক আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে তাকে বিদায় জানিয়েছে।



রাত থেকেই রাস্তার পাশে তাঁবু টানিয়ে মানুষজন অপেক্ষায় ছিল রানির শেষযাত্রা দেখার জন্য। মোট কতজন মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানাতে অংশগ্রহন করেন সে বিষয়ে টাইমস রেডিওকে ডোনেলান বলেন “এটা মোটামুটি আড়াই লাখের কাছাকাছি। সুনির্দিষ্ট সংখ্যাটি কত, তা বের করার চেষ্টা করছি আমরা,”। 

রানির শবযাত্রা ভালোভাবে দেখা যাবে এমন জায়গা খুঁজে পেতে অনেকে সেখানেই রাত কাটিয়েছেন। লন্ডন এবং উইন্ডসরের রাস্তায় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে রানির শেষযাত্রা দেখেছেন তারা। জানিয়েছেন ভালোবাসা। অনেকেই রানিকে নিয়ে জানিয়েছেন নিজেদের অনুভূতির কথা। রানির শবযাত্রা দেখতে এসে নটিংহাম থেকে আসা ক্যামিলা মূর বলেন, “এইমাত্র যা দেখলাম তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এ দৃশ্য সত্যিই বিশেষ এবং স্মরণীয়।”

নার্স বেন ভেগা বলেন, “আজ আমার জন্য খুবই দুঃখের দিন। এখানে আমি ২০ বছর ধরে আছি। আমি রানিকে আমার আরেক মা হিসাবেই দেখতাম।”


Post a Comment

Previous Post Next Post