মণ্ডলীতে খ্রিস্টের বন্ধুত্ব

জাসিন্তা আরেং: কাথলিক মণ্ডলীতে স্বয়ং যিশু খ্রিস্টই বন্ধুত্বের ভিত্তি। বন্ধুত্বের পবিত্র সম্পর্কে তিনি নতুন এবং অসামান্য এক মাত্রা সংযোজন করেছেন, যা আমাদের মানব জীবনে বন্ধুত্বের প্রেরণা এবং আদর্শ। যুগ-যুগ ধরে পবিত্র বাইবেল খ্রিস্টীয় বন্ধুত্বের আদর্শ এবং সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। পবিত্র বাইবেলে অনেক অর্থপূর্ণ গল্প রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে খ্রিস্টীয় বন্ধুত্বের গল্পই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। খ্রিস্টের সেই বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত মণ্ডলীর সকলকে আহ্বান জানায় তাঁর প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে।

স্বয়ং যিশু খ্রিস্ট নিজেই বন্ধুত্বের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছেন এভাবে- “যে কেউ নিজের বন্ধুদের জন্য প্রাণ সমর্পণ করে, তার চেয়ে অধিক ভালোবাসা আর কিছু হতে পারে না। যদি তোমরা আমার আদেশ পালন কর, তবে তোমরা আমার বন্ধু বলেই গণিত হবে। আমি তোমাদের আর দাস বলছি না, কেন না প্রভু কি করেন, তা দাস জানে না; কিন্তু তোমাদেরকে আমি বন্ধু বলেই ডাকছি, কারণ আমার পিতার কাছ থেকে আমি যা শিখেছি, তাই তোমাদের জানাচ্ছি।” [যোহন:১৫:১২-১৫]

খ্রিস্ট নিজেই মণ্ডলীতে সত্যিকারের বন্ধুর এক বিশুদ্ধ এবং অদ্বিত্বীয় দৃষ্টান্ত। তিনি তাঁর বন্ধুদের সর্বদা নিজের মতোই ভালোবেসেছেন এবং বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করেছেন। তাই তিনি তার বন্ধুদের সকল পাপের ত্রুশ একাই বহন করেছেন। তাঁর এই বন্ধুত্বের জন্য তিনি নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতে কুন্ঠাবোধ করেননি। আমরা যিশু খ্রিস্টতে বিশ্বাস রেখে যে কেউ তাঁর বন্ধু হয়ে উঠতে পারি। খ্রিস্টের সাথে বন্ধুত্বের মাধ্যমে আমরা তাঁর সান্নিধ্যে জীবন অতিবাহিত করার সুবর্ণ সুযোগ পেতে পারি। তিনি আমাদের ব্যক্তিজীবনের পরিত্রাতা। তিনি মনের সকল কালীমা মোচন করে আমাদের জীবনকে নবায়ন করবেন। যীশুতে বিশ্বাস ও ভক্তির মাধ্যমে আমরা নবজন্ম লাভ এবং জীবনকে নতুন যাপনের সুযোগ পেতে পারি। একদিন পবিত্র ক্রুশ সম্প্রদায়ের একজন পুরোহিত বলেছিলেন যে, ‘একজন বন্ধু তাঁর সত্যিকারের বন্ধুর কাছে যা আশা বা প্রত্যাশা করেন, খ্রিস্টও আমাদের প্রত্যেকের কাছে তাই আশা করেন এবং সেই আশা বা আকাঙ্ক্ষা পূরণের মাধ্যমে আমরা খ্রিস্টের বন্ধু হয়ে উঠতে পারি।’

আমাদের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পর্ক হলো বন্ধুত্বের সম্পর্ক। একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে বন্ধু হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি। সত্য কথা বলতে- বন্ধু হলো জীবনের অবিচ্ছেদ্য এক পরম আপনজন যে আমাদের হৃদয়ের খুব কাছাকাছি থাকে। যার সাথে জীবনের কম-বেশি সবকিছু সহভাগিতা করা যায়, বিপদে-আপদে পাশে পাওয়া যায়, অন্তরের গভীরের কথা অকপটে বলা যায়। যার কাছে মনের কষ্ট, রাগ-অনুরাগ অনায়াসে ব্যক্ত করা যায়। বলা যায় যে- দুঃখকে দু’ভাগে বিভক্ত করা এবং আনন্দকে দ্বিগুণ করা। কারো-কারো জীবনে এমন অনেক বন্ধু আছে, যারা সহোদর ভাই-বোনের চেয়েও আপন। তাই একটা প্রবাদ আছে- ‘তোমার বন্ধুকে বা পরিবারের বন্ধুদের কখনও পরিত্যাগ করো না।’ [প্রবাদ:২৭:১০] কারণ বিপদের দিনে বন্ধুর এবং তার সুপরামর্শের প্রয়োজন হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, বন্ধুত্ব মুদ্রাস্ফিতির মত নয়, যা মুহূতের মধ্যেই ফেঁপে উঠে, বন্ধুত্ব হলো ভালো মদের মত যা সময়ের সাথে-সাথে আরো দৃঢ়তা এবং পরিপক্কতা লাভ করে। আমাদের জাগতিক জীবনে ‘সুগন্ধি এবং ধূপ যেমন হৃদয়ে আনন্দের সঞ্চার করে, আর তেমনি একজন বন্ধুর আন্তরিক উপদেশসমূহও মনে এক আনন্দের সঞ্চার করে।’ [প্রবাদ:২৭:৯] 

সহজাতভাবে, আমাদের বন্ধুত্ব হয় মানুষে-মানুষে, আর এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা কি কখনো খিস্টকে বন্ধু হিসেবে আমাদের জীবনে স্থান দেয়ার কথা ভেবেছি? হয়তো ভাবিনি! কারণ, ছোটবেলা থেকে আমরা খ্রিস্টকে আমাদের জীবনে মুক্তিদাতারূপে জেনে এসেছি এবং তাঁর আরাধনা করেছি। যার ফলে, খ্রীস্টের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেনি। কিন্তু আমরা যেন খ্রিস্টকে শুধু পরিত্রাতা রূপেই না দেখি, আমরা যেন খ্রিস্টকে নিয়ে একটু অন্যরকম ধ্যান করি; তবেই আমরা খ্রিস্টকে আমাদের পরম আপনজন ও শ্রেষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আমাদের জীবনে স্থান দিতে পারবো। তিনি ধনী-গরিব, শিশু-বৃদ্ধ-বণিতা নির্বিশেষে সকলের বন্ধু হতে হতে আগ্রহী, শুধু আমাদের সাড়াদানের অপেক্ষা। আমরা তাঁর সাথে আমাদের সকল অব্যক্ত ব্যাথা-গ্লানি, আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং আনন্দের কথা সহভাগিতা করতে পারি। কারণ তিনিই আমাদের সুপরামর্শদাতা, এবং দুর্বলের শক্তি এবং বিপদে একমাত্র সহায় ও আশ্রয়।

ঈশ্বরের উপস্থিতিতে জীবন যাপনের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো- খ্রিস্টের সাথে বন্ধুত্ব করা। খ্রিস্ট আমাদের মাঝে মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে ঈশ্বরের পালক পুত্র এবং তাঁর খুব কাছের বন্ধু হয়ে উঠেছেন। ঈশ্বর খ্রিস্টের মাধ্যমে তাঁর অগাধ ভালোবাসাকে বোঝার পথকে আরো সুগম করে তুলেছেন। কারণ খ্রিস্ট নিজেই আমাদের ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছেন। আমরা খ্রিস্টের বন্ধুত্বকে স্বীকার করে পরমআত্মা স্বয়ং ঈশ্বরের সঙ্গেই পুনর্মিলিত হতে পারি। মণ্ডলীতে আমরা সবাই খ্রিস্টের বন্ধুত্বকে আদর্শ মেনে তাঁর প্রতি বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে পারি।

বলা যায়, মণ্ডলীতে খ্রিস্টের অনুসারী অর্থাৎ পুরোহিত যারা রয়েছেন তারা সকলেই আমাদের বন্ধু। কারণ তাঁরা প্রত্যেকে মণ্ডলীতে খ্রিস্টেরই প্রতিনিধিত্ব করেন। খ্রিস্টের মাধ্যমে ঈশ্বরই তাদের মনোনিত করেছেন। তাদের মধ্যদিয়ে আমরা খ্রিস্টের ভালোবাসা-দয়া-ক্ষমা-বিশ্বস্ততা-নম্রতা এবং বন্ধুত্ব আমাদের জীবনে উপলব্ধি এবং অনুধাবন করতে পারি। তারা খ্রিস্টের হয়ে খ্রিস্টের মধ্যদিয়ে আমাদের আধ্যাত্মিক যত্ন নিয়ে থাকেন।

পবিত্র পুরোহিতদের মধ্যদিয়েই প্রকাশিত হয় খ্রিস্টীয় এবং ঐশরিক মহিমা। আমরাও পুরোহিতদের মত খ্রিস্টের প্রতিনিধিত্ব করতে পারি, খ্রিস্টীয় বন্ধুত্বের আদর্শকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সামনে তুলে ধরতে পারি। খ্রিস্টের শিখানো পবিত্র জীবন যাপনের মধ্যদিয়ে তাঁর সাক্ষ্য বহন করতে পারি। সেজন্য আমাদের খ্রিস্টকে জানতে হবে, খ্রিস্টকে জানতে হলে আমাদের প্রতিদিন পবিত্র বাইবেল পাঠ করতে হবে এবং তাঁর প্রতিটি বাণীকে ধ্যান করতে হবে। প্রতিদিন জীবনে ঈশ্বরের বাণীকে অনুসরণ করতে হবে। অবিরত তাঁর আরাধনা এবং উপাসনার মধ্যদিয়ে আমরা তাঁর নিরব উপস্থিতি আমাদের জীবনে অনুধাবন করতে সক্ষম হব। খ্রিস্টকে পাওয়ার মধ্যদিয়ে তাঁর বন্ধুত্বের আহ্বান আমরা শুনতে এবং আনন্দপুর্ণ সাড়া দিতে পারবো।

আমাদের ব্যক্তিজীবনের সবচেয়ে সুন্দর এবং বিষ্ময়কর অংশ হলো বন্ধু। ড: হাওয়ার্ড হেনড্রিক্স একদিন সেমিনারিয়ানদের উদ্দেশে বলেছিলেন- ‘দশ বছর পরে তোমরা যখন সেমিনারীর বাইরে যাবে, তখন দুটি জিনিস সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে। সেটা হলো যে বই তুমি পড়বে এবং যার সাথে তুমি বন্ধুত্ব করবে।’। তিনি ‘বই এবং বন্ধুত্ব’ এই দু’টি জিনিস সতর্কতার সাথে চয়ন করার আহ্বান জানান। বর্তমান বিশ্বে আধুনিক প্রযুক্তির আশীর্বাদে ফেসবুকে খুশিমত বন্ধুত্ব করা যায়। ফেসবুকের বন্ধুত্ব যেন মরীচিকারই মতো। যেখানে বন্ধুত্বের নামে মানুষকে প্রতারিত করা যায়। 

তাই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। কারণ যে কেউ বন্ধু হতে পারে না এবং সবাই বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতেও জানে না। পবিত্র বাইবেলে লেখাই আছে যে, ঈশ্বর এবং যিশু তাদের মনোনিতজনকেই ‘বন্ধু’ বলে ডেকেছেন, সবাইকে তিনি ‘বন্ধু’ বলে ডাকেননি। বাইবেলের পুরাতন নিয়মে ঈশ্বর আব্রাহামকে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছিলেন- ‘আব্রাহাম ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখলেন আর সেইজন্য ঈশ্বর তাকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন। তাই তাকে ‘ঈশ্বরের বন্ধু’ বলে ডাকা হলো।’ [যাকোব:২:২৩] 

কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে গেলে তাঁর সম্বন্ধে ভালোভাবে জেনে-বুঝে আমরা বন্ধুত্ব করি। কিন্তু আজ প্রশ্ন হলো খ্রীস্টের সাথে বন্ধুত্ব করার যুক্তি হলো তাঁর সাথে মণ্ডলীর সবাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে কাথলিক মণ্ডলীর সনাতন ইতিহাস। যার সাথে রয়েছে সকল খ্রিস্টভক্তের অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। খ্রীস্টের বন্ধুত্বকে যাচাই বা সন্দেহ করার কোন পথ তিনি আমাদের সামনে খোলা রাখেননি। তিনি তো নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে প্রমাণ করেই দিয়েছেন, তিনি তাঁর বন্ধুদের কতটা ভালোবাসেন। যিনি বন্ধুর জন্য নিজের প্রাণ দিতেও প্রস্তুত, সেই তো প্রকৃত বন্ধু। যিশু খ্রিস্ট শুধু সৎ এবং ধার্মিক লোকদের বন্ধু ছিলেন না, তিনি পাপীদেরও বন্ধু ছিলেন । তিনি তাদের বাড়িতে যেতেন এবং তাদের সাথে একসাথে খাওয়া-দাওয়া করতেন। সেজন্য অনেকবারই তিনি মানুষের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিলেন: ‘লেবীয় যীশুর জন্য তার বাড়িতে একটা বড় ভোজ দিলেন। তাঁদের সঙ্গে অনেক কর-আদায়কারী ও অন্য লোকেরা খেতে বসলো। তখন ফরীশিরা ও তাঁদের দলের ধর্ম-শিক্ষকেরা বিরক্ত হয়ে যিশুকে বললেন, ‘তোমরা কর-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া কর কেন?’ যিশু তাদের বললেন, ‘সুস্থদের জন্য ডাক্তারের দরকার নেই বরং অসুস্থদের জন্যই দরকার আছে। পাপ থেকে মন ফিরাবার জন্য আমি এসেছি। আমি ধার্মিকদের ডাকতে আসেনি বরং পাপীদেরই ডাকতে এসেছি।’ [লূক৫:২৯-৩২] লোকেরা আরও বললেন, ‘দেখ, এই লোকটা পেটুক ও মদখোর, কর-আদায়কারী এবং খারাপ লোকদের বন্ধু।’ [লূক৭:৩৪] এই ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা দেয় যে, আমরা যেন বন্ধুত্ব করতে গিয়ে কারো পাপ-পূণ্যের বিচার করার চেষ্টা না করি। আমরা যেন আমাদের বন্ধুত্ব দিয়ে তাদেরকে সত্য এবং সততার পথে পরিচালনা করতে পারি এবং খ্রিস্টের মত ভালোবাসতে পারি।

খ্রিস্টের বন্ধুত্ব মানুষের এবং ঈশ্বরের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন যা আমাদের ঈশ্বরের সাথে পুনরায় সংযুক্ত করতে সহায়তা করতে পারে। আমরা প্রতিনিয়ত ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছি, তাঁর অবাধ্য হয়ে জীবন যাপন করছি এবং জাগতিকতার মোহে তাকে সারাদিনে একবারের জন্যও স্মরণ করার সুযোগ পাচ্ছি না। এক্ষেত্রে খ্রিস্টের বন্ধুত্ব আমাদের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে। খ্রিস্টের সাথে বন্ধুত্বের মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের সাথে পুনরায় মিলিত হতে পারি এবং অনন্ত জীবনের সহভাগী  হয়ে উঠতে পারি । মণ্ডলীতে যিশু খ্রিস্ট হলেন ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্বের প্রথম সোপান। ঈশ্বর নিজেই চেয়েছিলেন যেন আমরা খ্রিস্টের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলি, তাই তিনি খ্রিস্টকে আমাদের মাঝে আমাদেরই মত করে পৃথিবীতে পাঠালেন। একমাত্র খ্রিস্টের সাথে বন্ধুত্বের মাধ্যমেই আমরা ঈশ্বরের এবং মানব জাতির বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী এবং সুদৃঢ় করতে পারি।

পার্থিব জগতে মানুষের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব হলো অস্থায়ী। কিন্তু খ্রিস্টের সঙ্গে বন্ধুত্ব সেতো চিরস্থায়ী বন্ধুত্ব। এই চিরন্তন বন্ধুত্বকে আমাদের হৃদয়ে স্থান দেয়ার অর্থ হলো স্বয়ং খ্রীস্টকেই জীবনে স্থান দেওয়া, তাঁর সাথে একই পথে হেঁটে চলা। খ্রীস্টের বন্ধুত্ব আমাদের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবনের মূল ভিত্তিপ্রস্তর হওয়া উচিত। এই বন্ধুত্বের প্রভাবে আমাদের প্রতিটি সম্পর্ক নবরুপ লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যার ফলে মানুষের মাঝে কমতে পারে সম্পর্কের শিথিলতা। খ্রীস্টের বন্ধুত্বকে স্বীকারের ফলশ্রুতিতে, আমাদের জীবনে যে পরিবর্তন আসবে তা আমরা সময়ের ব্যবধানে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবো।

পোপ ফান্সিস তাঁর উপদেশে বন্ধুত্বের বিষয়ে বলেছেন, ‘প্রভু যিশু খ্রিস্ট চিরদিনই তোমার বন্ধু। যদিও-বা তুমি তাকে হতাশ কর এবং তাঁর নিকট হতে দূরে চলে যাও, তারপরও যিশু খ্রিস্ট সর্বদা তোমার জন্য যা উৎকৃষ্ট তা করতে কখনো বিরত থাকেন না বরং তিনি সর্বদা তোমার কাছাকাছি থাকেন। কারণ তুমি নিজেকে যতটা বিশ্বাস কর, তিনি তোমাকে তাঁর চেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন।” তিনি আরও বলেন যে, খ্রিস্ট আমাদের সকলকে তাঁর বন্ধুত্বের সাথে-সাথে সত্যিকারের স্বাধীনতা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করার আহ্বান  জানান এবং তিনি আমাদের ‘হ্যা’ বলার অপেক্ষায় আছেন। আমরা কি তাঁর বন্ধু হবার কথা চিন্তা করতে পারি না?

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাঁকুর বলেছেন, “বন্ধুত্ব বলিতে তিনটি পদার্থকে বোঝায় । দুইজন ব্যক্তি ও একটি জগত।” অর্থাৎ তাঁর মতে, দুজন সহযোগী হয়ে কাজ সম্পাদন করাই হলো বন্ধুত্ব। ঠিক তেমনি আমরা বাইবেল থেকে জানতে পারি যে, শুধুমাত্র খ্রিস্টের মাধ্যমে মানব জাতি পরিত্রাণ পায়নি, এক্ষেত্রে সার্বিক দিক থেকে সহায়তা করেছেন স্বয়ং ভগবান। ঈশ্বরের পরিকল্পনা এবং খ্রিস্টের ত্যাগ স্বীকার উভয় কারণেই মানবজাতি আজ পরিত্রাণ লাভ করেছে। তাই বলা যায় যে, ঈশ্বরের বিশেষ কৃপা এবং খ্রিস্টের ত্যাগের দ্বারাই ঈশ্বরের সাথে বন্ধুত্ব করা সম্ভব। কারণ ‘সবকিছু ঈশ্বরের কাছ থেকেই আসে, তিনি খ্রিস্টের মাধ্যমে আমাদের শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করলেন এবং আমাদের সকলকে খ্রিস্টের বন্ধু করার দায়িত্ব দিলেন।’ [২ করিন্থীয় ৫:১৮] প্রকৃতপক্ষে, খ্রিস্টের মাধ্যমে ঈশ্বরই আমাদের পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার সাথে বন্ধুত্ব এবং শিষ্যত্যের আনন্দ উপভোগ করার জন্য আহ্বান করেন। [২ করিন্থীয় ১৩-১৪]

আমাদের জীবনে বন্ধুত্ব হলো খ্রিস্টের উপহার। ঈশ্বর বলেছেন, ‘যে কেউ আমার পুত্র যিশু খ্রীস্টের উপহার গ্রহণ করবে, সে আমাকেই গ্রহণ করবে।’ [১যোহন ২:২৩] অথাৎ খ্রিস্টকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার অর্থ হলো পিতা ঈশ্বরকেই গ্রহণ করা। সাধু পোপ দ্বিতীয় জন পল তাঁর একটা ব্যক্তিগত পত্রে (৩১শে মার্চ, ১৯৭৬) তাঁর বন্ধুকে লিখেছিলেন: ‘বন্ধু হলো ঈশ্বর প্রদত্ত উপহার।’ আমরাও যেন সাধু জন পলের মত খ্রিস্টের বন্ধুত্বকে উপহার হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। কারণ এই বন্ধুত্ব হলো ঐশরিক ভালোবাসারই বর্হিপ্রকাশ। এই বন্ধুত্ব পাপী এবং ধার্মিক সকলের জন্যই এক অমূল্য উপহারস্বরূপ।

মণ্ডলীতে খ্রিস্টের বন্ধুত্ব আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ, যা স্বয়ং ঈশ্বর আমাদের উপহার দিয়েছেন। তাই তাঁর বন্ধুত্বের আহ্বানে সাড়াদান করা সকল খ্রিস্টভক্তদের পবিত্র কর্তব্য। তাই আসুন, মণ্ডলীতে খ্রিস্টের বন্ধুত্বকে স্বীকার করি এবং তিনি আমাদের কাঁধে যে দায়ভার তুলে দিয়েছেন, তা নিষ্ঠার সাথে পালন করি। বন্ধুত্বের যে শিক্ষা তিনি আমাদের দিয়েছেন তা জীবনে অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা খ্রিস্টের প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠি। একমাত্র খ্রিস্টই আমাদের বিশ্বস্ত এবং প্রকৃত বন্ধু যার কোন রুপান্তর নেই। এখন প্রশ্ন হলো-আপনি কি খ্রিস্টের বন্ধু হবেন? খ্রিস্ট আপনাদের জন্য অপেক্ষায় করছেন....। 


[জীবন ও সমাজে- পাঠাতে পারেন আপনারও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 

[দৃষ্টি আকর্ষণ: যদি মনে করেন এমন কোন আলোকিত ব্যক্তিকে নিয়ে আমাদের জীবন ও সমাজের অনলাইন ম্যাগাজিনে বিশেষ ফিচার করা যেতে পারে, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা সেই ফিচার করে তার আলো ছড়াবো, যাতে অন্যরাও সেই ব্যক্তিত্বের আলোয় আলোকিত হতে পারে। 

 আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন : jibonoshomaj@gmail.com] 

[পাঠকদের  দৃষ্টি আকর্ষণ:  করোনাকালে আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের এমন কোন অগ্রণী ভূমিকা কি ছিল যা নিয়ে জীবন ও সমাজ-এ ফিচার করা যেতে পারে। তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন : jibonoshomaj@gmail.com]  



Post a Comment

Previous Post Next Post