মানবহিতৈষী সাঈদা খানম মুক্তা’র গল্প

জীবন ও সমাজ ডেস্ক: সাঈদা খানম মুক্তা একাধারে বিশিষ্ট লেখিকা ও প্রকাশক এবং সমাজসেবিকা। একজন মানবহিতৈষি হিসেবেও সমাজে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ২৭ নভেম্বর মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ঢাকার রামপুরাস্থ নিজস্ব বাড়িতে। পরিবারের সবাই পূর্ব থেকে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের কারণে জন্মগ্রহণ করেন।পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় সাঈদা নাঈম। সবার মতো স্বাভাবিকভাবেই ছেলেবেলা কাটিয়েছেন। তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশুনা করেন। এরপর ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল থেকে সাফল্যের সাথে এসএসসি পাশ করেন।

লেখালেখির হাতেখড়ি হয় তখন থেকেই। শিশু একাডেমিতে স্বরচিত কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা এবং কবিতা আবৃত্তিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন স্কুলের বাংলা শিক্ষিকা মিলি রহমান ও ইংরেজি শিক্ষিকা রুলি আপার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায়। সেইসাথে প্রাইভেট টিউটর শুশেনজিৎ স্যার জগন্নাথ হলে থাকার ফলে তাকে লিখতে সহযোগিতা করতেন। সেই থেকেই পুরোদমে লেখালেখির যাত্রা শুরু করেন।

১৯৯৬ সালে বিয়ের পর পড়াশুনাকালীন তিনি সন্তান লাভ করেন। সন্তানদের বড় করার সাথে-সাথে এবং তাদের পড়াশুনা ও নিজের পড়াশুনা শেষ করে গৌরবের সাথে আইন পাশ করেন। তবে লক্ষ্যণীয় যে, এসবকিছুর পাশাপাশি তার সাহিত্যচর্চা করে গেছেন। সংসার-পড়াশুনা বা অন্যান্য দায়িত্বের বেড়াজালে কখনও থেমে থাকেননি। সেকারণেই কখনও পত্রিকায়, কখনও বা বই আকারে তার মূল্যবান লেখাগুলি প্রকাশ করে গেছেন। লেখিকার প্রথম গল্পগ্রন্থ “প্রজাপতি মন”। তিনি গল্প লিখতে তিনি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এপর্যন্ত প্রকাশিত বই ত্রিশটির মতো হবে। 

এরপর তিনি সমাজের নারীদের নিয়ে ভাবতে থাকেন। সুবিধাবঞ্চিত নারী ও শিশুতো রয়েছেই এছাড়াও সমাজের অনেক নারী আছে, যারা তাদের প্রতিভা বিকাশে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। হৃদয় থেকে সেটি অনুভব করেন এবং তিনি ২০১২ বা ২০১৩ তে নারীদের নিয়ে আলাদা ভূবন তৈরি করেন। প্রথম নাম দেন, “আত্মকথা”। পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন হয়ে আজকের সবার পরিচিত এবং জনপ্রিয় সংগঠন, “বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটি ”। বর্তমানে তিন হাজার নারী লেখক রয়েছে। ভার্চুয়ালেও লেখার সুযোগ রয়েছে। সামাজিক কর্মকান্ডে সবার অংশগ্রহণ রয়েছে।


নারী লেখিকা ও তাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে, যে কোনো কাজই নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। এখনও সমাজ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে চায় না বা পারে না যে, একজন নারী সাহিত্যিক হবে। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামী থেকে বের হওয়ায় কর্মক্ষেত্র ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের বেশ অংশগ্রহণ দেখা যায় বর্তমানে। সেইসাথে শিক্ষিতার হারও বেড়েছে দেশে। কিন্তু একটাই সমস্যা, তা হলো, প্রচলিত সমাজে সৃজনশীল কাজে নারীদের অংশগ্রহণ সহজভাবে মেনে নিতে পারে না এখনও। কারণ এখানে সময় নষ্ট, এখানে কোনো লাভ নেই আরও ইত্যাদি-ইত্যাদি যা সম্পর্কে সবাই অবহিত আছে। এরপরও নারীরা থেমে নেই। স্বপ্ন দেখে এবং তা পূরণের জন্য মাধ্যম প্রয়োজন। সেটি বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটি করে দিচ্ছে। এমন আরও সংগঠন রয়েছে, তারা সকলে ভালো কাজ করছে।

প্রকাশনার সংস্থা স্থাপন ও পরিচালনার বিষয়ে তিনি বলেন, বই প্রকাশ করতে-করতে একদিন শখ জাগে ভালোমানের একটি বই তিনিও তো তৈরি করতে পারেন। তাই তিনি শুরু করে দিলেন প্রকাশনার কাজ। ধ্রুপদী পাবলিকেশনস্ নামে প্রকাশনী সংস্থা তিনি চালাচ্ছেন। সৃজনশীল এক মাধ্যমে কাজ করতে লেখিকার বেশ ভালো লাগে। আর যে কোনো কাজেই প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হয়, এটা তিনি বিশ্বাসই শুধু করেন না, ধারণও করেন। 

আর লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে তিনি জানান, লিটল ম্যাগাজিন আসলে কি? সেটি আগে জেনে ম্যাগাজিন তৈরি করতে হবে। যখন থেকে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় সেটির ইতিহাস জানতে হবে। লিটল মানেই ছোট আকার নয়। এর ব্যাপক ইতিহাস রয়েছে। এখানে টিকে থাকতে হলে ধারাবাহিকতা এবং কাজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

এছাড়াও তিনি জানান, চলমান জীবনের সময়কে ভাগ করে নিলে সবই সুন্দরভাবে সম্ভব। তবে বড় বিষয়, প্রয়োজন পারিবারিক সহযোগিতা ও সমর্থন। নারীরা দশভুজা। তা প্রকৃতপক্ষেই সত্যি। একজন নারীর কত রূপ! কখনও কন্যা, কখনও জায়া ও কখনও জননী। সব পবিত্র গ্রন্থে নারীদের সুউচ্চে অবস্থানে রেখেছেন সৃষ্টিকর্তা। “আমরা নারী, সব পারি।” এই আত্মবিশ্বাসই যথেষ্ট।

মূলত, নারী লেখক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা তিনি। যখন ভার্চুয়াল যুগ শুরু হয়, তখন অনেকেই নিজের লেখা, অনুভূতি লিখতে শুরু করেন। সেসময় তা নিয়ে অনেক পারিবারিক দ্বন্দ্বের সম্মুখীনও হয়েছেন। সেই দ্বন্দ্ব রোধ করার জন্য নারীদের আলাদা করে লেখার জন্য “বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটি’র অনলাইন গ্রুপ তৈরি করেন, যেখানে সব লেখক বা সদস্য নারী এবং গ্রুপটি পাবলিক নয়। সাংগঠনিকভাবে যাত্রা শুরুর আরো আগে সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও নারীদের নিয়ে সদস্যভুক্ত সাহিত্যিকদের আর্থিক সহায়তায় সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে এ সংগঠন। এদিকে, অনেককেই স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, শিক্ষাবৃত্তি ও বিভিন্ন দুর্যোগে ত্রাণ ও সেবা দিয়ে থাকেন। যেমন: শীতে বস্ত্র, মেডিক্যাল সেবা ছাড়াও আরো অনেক কাজ করে থাকেন। কাজ করতে চাইলে কাজের শেষ নেই। যতটুকু সম্ভব ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে তা করে যাচ্ছেন অবিরত।

নারী লেখক সোসাইটির সবাই বেশ আন্তরিক। বলতে গেলে, একটি পরিবারের মতো সবাই কাজ করছেন মিলে-মিশে। কাজ করার জন্য আর্থিক সহযোগিতা ও অনুদান প্রয়োজন। সমাজের বিত্তবানরা উদারভাবে এগিয়ে আসলে আরো ভালোভাবে ও বৃহত্তর পরিসরে কাজ করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটির সাহিত্যে একটি বড় কাজ হচ্ছে, “নূরজাহান বেগম পদক”। এ পদকটি দিয়ে নারী লেখকদের মধ্য থেকে যোগ্য লেখিকাদের সম্মানিত করা হয়। পরিশেষে বলা যায় যে, বেশ ভালো কাটাচ্ছেন তিনি জানান। সমাজ, পরিস্থিতি সবকিছু মানিয়ে নিয়ে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করাতে তিনি বিশ্বাস ।


[দৃষ্টি আকর্ষণ: যদি মনে করেন এমন কোন আলোকিত ব্যক্তিকে নিয়ে আমাদের জীবন ও সমাজের অনলাইন ম্যাগাজিনে বিশেষ ফিচার করা যেতে পারে, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা সেই ফিচার করে তার আলো ছড়াবো, যাতে অন্যরাও সেই ব্যক্তিত্বের আলোয় আলোকিত হতে পারে। 

 আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন : jibonoshomaj@gmail.com] 

[পাঠকদের  দৃষ্টি আকর্ষণ:  করোনাকালে আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের এমন কোন অগ্রণী ভূমিকা কি ছিল যা নিয়ে জীবন ও সমাজ-এ ফিচার করা যেতে পারে। তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন : jibonoshomaj@gmail.com]  


[জীবন ও সমাজে- পাঠাতে পারেন আপনারও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 


Post a Comment

Previous Post Next Post