জ্যাষ্টিন গোমেজ : ১১ ডিসেম্বর ২০২১ খ্রিস্টাব্দ রোজ শনিবার কেআইবিতে বাংলাদেশ কাথলিক চার্চের আয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহাআড়ম্বরপূর্ণভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করা হয়।
এইদিন বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিনিধিসহ মোট ১০০০ জন অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুজ ওএমআই এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। গেস্ট অব অনার হিসেবে আসন গ্রহণ করেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও সিএসসি। এছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি এবং মাননীয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী জনাব মো: ফরিদুল হক খান এমপি।
এছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং, মাননীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এবং বাংলাদেশের আটটি ধর্মপ্রদেশের বিশপগণ। বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী খ্রিস্টান বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা, বিভিন্ন খ্রিস্টান চার্চের প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে। এরপর বরণ নৃত্য ও ফুলেল শুভেচ্ছার মাধ্যমে আমন্ত্রিত অতিথি ও প্রতিনিধিত্বকারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগতম জানানো হয়।
বাংলাদেশ ক্যাথলিক বিশপ সম্মিলনীর (সিবিসিবি) ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও রাজশাহীর বিশপ জের্ভাস রোজারিও সার্বজনীন প্রার্থনা পরিচালনা করেন। সিবিসিবির সেক্রেটারি জেনারেল ও ময়মনেসিংহের বিশপ পনেন পল কুবি, সিএসসি স্বাগত বক্তব্য রাখেন শুরুতে।
অনষ্ঠানে মাননীয় স্পীকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে সমৃদ্ধির সোপানে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের প্রায় শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিতকরণ, দরিদ্রতার হার ২১ শতাংশে নামিয়ে আনা, অতি দরিদ্রদের জন্য আশ্রয়ণের ব্যবস্থাকরণ, নারী উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী তরুণ। তিনি তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন ধারন করে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত একটি বিশেষ স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়া জীবিত ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। উল্লেখ্য কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথিগণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খ্রিস্টান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধিত্বকারী ৪০ জনকে বিশেষ মেডেল পড়িয়ে দেন। এ সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখে মৃত্যু বরণ করেছেন এমন ৩৫ জনকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের অতিথিদের হাতে বিশেষ স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ক্যাথলিক চার্চের উদ্যোগে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে। প্রার্থনা, সভা ও সেমিনারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বদেশপ্রেম বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াস নেয়া হয়েছে। এ সময়ে দেশজুড়ে চার (৪) লক্ষের বেশি ফলদ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। স্থানীয় চার্চ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সৌধ, স্মারক এবং দলিলপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, এবং স্বীকৃত খ্রিস্টান মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রথমবারের মতো কাথলিক চার্চের উদ্যোগে স্বাধীনতা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তীকালে খ্রিস্টান দেশ ও জাতি গঠনে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্ম্পৃক্ততা, অবদান এবং সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে খ্রিস্টানদের ভাবনাকে লিপিবদ্ধ করে বই আকারে প্রকাশ করার কাজ চলমান রয়েছে।