শিশুকে ভালবাসুন

জাসিন্তা আরেং : বিশ্বে ও আমাদের দেশে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা দিন-দিন বেড়েই চলেছে। এখন শিশুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি সমাজে আলোড়ন তুলেছে। শিশুরা পরিবারে নিরাপদে বেড়ে উঠে এটাই এতোদিন প্রচলিত সমাজের বাস্তবতা ছিল। কিন্তু বর্তমানে মানুষের মাঝে লুকায়িত পশুত্ব এমনই এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পিতা তার নিজ সন্তানকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করতেও পিছপা হচ্ছে না। প্রতিশোধ নেয়ার মানসিকতা মানুষকে অমানবিক ও পশুতুল্য আচরণ করতে তাড়িত করে। কিন্তু সে তাড়নাকে জয় করাই মনুষ্যত্বের কাজ। কিন্তু এ যুগে মানুষের নিষ্ঠুরতা চরম পর্যায়ে পৌছলে মানুষ পশুত্বকে ছাড়িয়ে যায়, তারই দৃষ্টান্ত হলো সুনামগঞ্জে ঘটে যাওয়া তুহিন হত্যাকাণ্ড।

২০১৯ এ সুনামগঞ্জে ঘটে যাওয়া শিশু হত্যাকাণ্ড সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে শিহরিত করেছে। ঘুমন্ত শিশু যদি নিজ পরিবারেও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তবে তাদের দায়ভার কে নেবে? যেখানে সন্তান আপনজন ও নিকটাত্মীয়-পরিজনদের প্রতিশোধপ্রবণতার শিকার হতে পারে, সেখানে পরিবারে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। শিশু তুহিন হত্যার মধ্যদিয়ে যে বীভৎস অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতা প্রকাশ পেয়েছে তা একমাত্র নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষের দ্বারাই সম্ভব। অন্যকে হেয়-প্রতিপন্ন করা এবং প্রতিশোধপ্রবণতার নেশা মানুষকে অনৈতিকতার দিকে ধাবিত করছে যা ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার দিকেই ধাবিত করছে। ক্রমশ পরিবর্তিত সমাজে বিবেকবর্জিত কাজ করাও এক শ্রেণির লোকদের নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুরা পরিবারে বেড়ে উঠে, বড়দের আচার-আচরণ দেখেই অনুকরণ করে এবং তাদের দেয়া শিক্ষাই বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে। কিন্তু বর্তমানে পরিবারে শিশুদের সঠিক শিক্ষা ও সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করাও ভাবনার বিষয়। দেশের বিভিন্ন  স্থানে পারিবারিক পরিমণ্ডলে যে অস্থিতীশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা দেখে কোমলমতি শিশুরাও শঙ্কিত ও শিহরিত।

পিতা-মাতার ও পরিবারের অন্য ব্যক্তিবর্গরা যেন শিশুর জীবন নাশের কারণ না হয় তা নিশ্চিত করা অতীব প্রয়োজন। পাশপাশি শিশুর সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া এবং শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করাও পরিবারের অন্যতম দায়িত্ব। প্রতিশোধপ্রবণ মানসিকতার দৃঢ় শৃঙ্খল থেকে নিজেদের মুক্ত করতে হবে তা না হলে আগামীতে পরিবার ও পিতা-মাতার কাছে প্রত্যাশার কিছুই থাকবে না। পিতা-মাতাকে সচেতন হতে হবে যেন সুদূর ভবিষ্যতে আর কারও সন্তানকে প্রতিশোধ ও নিষ্ঠুরতার বলি না হতে হয়। তাই পশুতুল্য মানসিকতা পরিত্যাগ করে নৈতিকতার আশ্রয় নিতে হবে। পিতা-মাতা যেন কখনও সন্তানের বিপদের কারণ না হয় সেদিকে সুনজর দিতে হবে। সরকার ও শিশু সুরক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিশুদের সুরক্ষা ও বেড়ে উঠার দিকগুলো সুষ্ঠুভাবে তদারকি করতে হবে। যেন কোন শিশু পরিবারের কারও দ্বারা নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার শিকার না হয়। সমাজ, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি ও কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করলে শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা হ্রাস পাবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। এক্ষেত্রে সন্তানকে ভালো কাজে উৎসাহিত করতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে সক্ষমতা অনুযায়ী সারা জীবন ভাল কাজ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে তাদের সামনে আদর্শ হয়ে থাকা। 

শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তাদের সামনে প্রদর্শিত আদর্শই তারা অনুকরণ করবে। আর এজন্য, অবশ্যই সন্তানের ভালো বন্ধু হতে হবে। যাতে করে সে তার ভাল লাগা, মন্দ লাগা, সবই সহভাগিতা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এমনকি কোন কাজ করার কথা চিন্তা করলেও যেন পরিবারের পরামর্শ নেয়ার কথা বিবেচনা করে। যে পিতা-মাতারা সন্তানের ভালো বন্ধু নয় বা হতে পারে না, সে সকল ছেলে-মেয়েদের বিপথে যাওয়ার প্রবণতা তুলনামূলক বেশি থাকে। এজন্য, পরিবারের সকল সদস্যদের একসাথে বসে খাওয়া-দাওয়া করা, সময় করে মাঝে-মধ্যে ঘুরতে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে পিতা-মাতার সচেতনতা আরও বেশি কাম্য।


লেখক: শিক্ষার্থী



Post a Comment

Previous Post Next Post