খাগড়াছড়িতে আদিবাসী মানুষদের সংগ্রামী জীবন-যাপন

জীবন ও সমাজ ডেস্ক : বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল মূলত তিন জেলা নিয়ে গঠিত যথা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। ফিচারে উঠে এসেছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির আদ্যপান্ত। পার্বত্য ও পাহাড়ী বনাঞ্চলে দূর্গম এলাকায় বসতি, পরিবার, সমাজ ও জাতি-গোষ্ঠি নিয়ে স্বাচ্ছন্দে প্রকৃতির মধ্যে তাদের বেড়ে উঠা। সমাজ ব্যবস্থায় পাড়া প্রধান কারবারী, কৃষ্টি-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে ক্রিয়ানুষ্ঠান ও বিভিন্ন পর্ব ও উৎসব পালিত হয়। বিস্তৃর্ণ সুউচ্চ পাহাড়ে উপত্যকায় ও পানির স্রোতধারা এবং বসতি আঙ্গিনায় জুমের ধান, শাকসবজি, বিভিন্ন প্রকারের ফল ফলাদি ও বসতির মধ্যে শুকর, গরু, ছাগল, হাস-মুরগী পালন করে অল্পতে পরিতৃপ্ত জনগোষ্ঠী পাহাড়কে ভালবেসে নিজেদের পাহাড়ী বলতে গর্ববোধ করে। এখানে স্বাধীনভাবে পরিশ্রমী নারী-পুরুষ সমঅধিকার নিয়ে বসবাস করে। এই পাহাড়ী এলাকায় সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন ও অনুপ্রবেশে তাদের আগ্রহ খুবই কম। 

খাগড়াছড়ির প্রেক্ষাপটে গভীর অরণ্যে ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা সচরাচর দেখা যায়। এছাড়া বাঙালি ও পানছড়ি এলাকায় সাঁওতাল বসতি রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জাতিসত্ত্বা খুবই বৈচিত্র্য রয়েছে, একই উপজাতির ভিতরে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ভাষাগত প্রভেদ জীবন-যাপনের পরিচয় খুবই উল্লেখযোগ্য। ত্রিপুরা উপজাতির মধ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যথাক্রমে গাবিং, ফাতং, নাইতং, তংবাই, খালি, আনংক, দেনদাওক, হারবাং ও দেবর্বক্ষ্মন রয়েছে। সমষ্টিগতভাবে ভাষার বিভিন্নতা থাকলেও তারা বিচ্ছিন্ন নয়, কারণ এদের ভাষা হল ককবরক যা শাব্দিক অর্থে মানুষের কথা। কক হল কথা বরক হল মানুষ।

চাকমা উপজাতি খাগড়াছড়িতে সংখ্যায় অনেক এদের গোষ্ঠীগত অনেক পরিচয় রয়েছে। যথাক্রমে পয়ো গোজা, বগা গোজা, পুংগোজা, বাবুর গোজা, হিংগা গোজা, হোক্কেং গোজা, দামেয় গোজা, বোরবো গোজা, চেক গোজা, পাংগোজা, আগুন গোজা, করকত্ত্বা গোজা, বাবুড়া গোজা; এছাড়াও, লারমা, খীসা, তালুকদার ও দেওয়ান নামে চাকমা পরিচিতি রয়েছে। এখানে চাকমা শব্দের মূল অর্থ হল পাহাড়ী মানুষ। খাগড়াছড়ি মং সার্কেল মারমা উপজাতি রাজবংশীয় মর্যাদায় ঐতিহ্য কৃষ্টি, ধন সম্পত্তি ও বিত্ত্বশালী এক সময় মারমাদের মগ বলা হয়। এদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যথাক্রমে প্লেংসা, কংদেংসা, ফ্রাংসা, লুংদোপ্রা, কাপেয়াংসা, ক্যাঅংসা, রেব্রেংসা, উয়েংসা, মারংসা, চ্যারিংসা। বলা যায় যে, ত্রিপুরাদের মূল ধর্ম সনাতন এবং চাকমা ও মারমাদের মূল ধর্ম পরিচয় বৌদ্ধ। বর্তমানে ত্রিপুরা, চাকমা ও মারমা কয়েকটি স্থানে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে খ্রিস্টবিশ্বাসে পরিচয় নিয়ে বিভিন্ন খ্রিস্টমন্ডলীতে অর্ন্তভূক্ত হয়েছে।

জীবন ও সমাজ অনলাইন ম্যাগাজিন এই ফিচার তৈরিতে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেন অত্র জেলার  কাথলিক মিশনের ফাদার রবার্ট গোনসালভেস তিনি একজন কাথলিক ধর্মযাজক। ফাদার রবার্ট গনসালভেছ পূণ্যপিতা সাধু পোপ ২য় জন পল কর্তৃক অভিষিক্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৩৩ বছর পূর্ণ হল এবং আসছে ১৯ নভেম্বর ৩৪ বছর শেষ হবে। এক পর্যায়ে ব্যক্তিগত সহভাগিতায় বলেন, যাজকীয় সেবাকাজের ৩৩ বছর অপূর্ব, অপরূপ ও বিস্ময়কর উপলব্ধি হল খ্রিস্টের ৩৩ বছরে জীবনকাল সম্পন্ন করে পিতার গৃহে মহাপ্রস্থান করেছেন। প্রতিদিন যাজকীয় জীবনের জন্য অন্তর থেকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা করি। আমার যাজকীয় জীবনের শুরুতেই বাণীপ্রচার, খ্রিস্টযাগ, প্রার্থনা সভা, খ্রিস্টভক্তদের গঠন প্রশিক্ষণ, সেবাকাজ ও পালকীয় কাজ করেছি। নারিকেলবাড়ীর বিস্তৃর্ণ জলাশয়, খাল-বিল এলাকায় নৌকানির্ভর পালকীয় কাজ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আর্চডাইয়োসিসের পাথরঘাটা ধর্মপল্লীর অভিবাসী আদিবাসীদের  অন্বেষণ ও তাদের মিল ফ্যাক্টরীর সন্নিকটে তাদের জীবন-যাপন ও শহরের প্রান্তে বসতিতে ধর্মীয় ও পালকীয় কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বর্তমানে খাগড়াছড়িতে বিশাল পাহাড় বনভূমিতে মফস্বলকেন্দ্রিক ধর্মপল্লী যাজকীয় সেবাকাজ করছি। গত ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ হতে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ মে মাস পর্যন্ত রাঙ্গামাটি হতে খাগড়াছড়িতে মন্ডলী গঠন ও খ্রিস্টীয় জনপদ তৈরী করার কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলাম। সম্প্রতি পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠিত প্রেরিত দূত সাধু যোহনের ধর্মপল্লীতে সহকারী পুরোহিতের দায়িত্ব নিয়ে এপ্রিল ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ হতে পাহাড়ী অঞ্চলের প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় ঘুরে-ফিরে যাজকীয় সেবাকাজ তথা দরিদ্র, অনগ্রসর, পিছিয়ে পড়া ও সুবিধা বঞ্চিত ত্রিপুরা, চাকমা ও মারমাদের কাছে প্রেরণধর্মী বাণীপ্রচার করে যাচ্ছি। আর তা খ্রিস্টেতে বিশ্বাস ও যাজকীয় অভিষিক্ত জীবনের আনন্দ নিয়ে কাজ করছি বলে বিশ্বাস করি। এ প্রেরণকাজে অমসৃণ, এবড়ো-থেবড়ো ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ঘাম ঝরানো পরিশ্রম দিয়ে যাচ্ছি, ফলশ্রুতিতে যেন এখানে টেকসই, সুদৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী ঐশরাজ্য বিস্তারের আলোকে ফলনশীল প্রজ্বলিত ধর্মপল্লীরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

জীবন ও সমাজের সাথে ফাদার রর্বাটের সাক্ষাৎকারে উঠে আসে : 



করোনাকালীন সময়ে ধর্মপল্লী ও স্থানীয় প্রশাসন মূলত কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? যারা করোনা আক্রান্ত তাদের কি ধরনের চিকিৎসা দিয়েছেন? 

মূলত এ চলতি বছরে ২০২০ খ্রীষ্টাব্দে ৮ মার্চ হতে উল্কার গতিবেগে কোভিড-১৯ নোভেল করোনাভাইরাস মরনঘাতী বিভীষিকাময় রুদ্ররূপ নিয়ে পাহাড়ী জনজীবনে প্রবেশ করেছে। স্থানীয় পরিবেশ হঠাৎ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে পাহাড়ী জনজীবনে ত্রাসের নির্মম রূপ অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আতঙ্ক না হয়ে সচেতন হন, ঘরে থাকুন নিরাপদে থাকুন ইত্যাদি নানাবিধ পোষ্টার, লিফলেট ব্যানার ও মাইকিং সর্বস্থানে প্রচারের ফলে সচেতনতার পাশাপাশি সবার মধ্যে আতঙ্কিত ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের আর্চডায়োসিস হতে মফস্বলে পালকীয় কাজ  বাণীপ্রচার সাময়িক বন্ধ রাখার  লিখিত নির্দেশ দেয়া হয়েছে । এ সময়ে দুরবর্তী পাহাড় অঞ্চলে খ্রিস্টভক্তগণ অতি কষ্টে সামাজিক বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে আমরা যারা তাদের আধ্যাত্মিক যত্নে নিয়োজিত আছি; আমাদের প্রতি সহানুভূতিস্বরুপ নিজেদের উৎপাদিত চাল, শাক-সবজি নিয়ে আমাদের সাথে দুর্দিনের বন্ধু ও সমব্যাথী হয়েছে। 

ধর্মপল্লী হতে চাল, ডাল, আটা, তেল, সাবান, সেনিটাইজার ও সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ শুরু হল আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে যখন স্থানীয় প্রশাসন সচেতনধর্মী মাইকিং -এর মধ্যদিয়ে মাস্ক পরিধানে কড়াকড়ি ও বল প্রয়োগ এবং পরিবহন ও দোকানপাটে সাবধানতা অবলম্বন করে জনজীবনে স্থবিরতা কাটিয়ে উঠে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। এ সময়ে পাড়াভিত্তিক ত্রাণ বিতরণ করা হয়, দুর্গম এলাকায় ত্রাণ দ্রব্যাদি বহনের অসুবিধার কারণে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, লোকপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা বাহিনী, এবং পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড ত্রাণ বিতরণ করে সাহায্য সহাযোগিতা করেছে। দুর্দিনে ঝুঁকি ও সংক্রমণের মধ্যে এলাকাভিত্তিক বাঁশের ব্যারিকেড, স্প্রে করা ও যাতায়াতে কড়া বিধিনিষেধের কারণে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র কবলিত ও কর্মহীন পাহাড়ীদের চাষাবাদ, বেঁচা-কেনা ও জীবন জীবিকার ওপর তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই সংকটে দায়-দায়িত্ব পুষিয়ে নিতে পাহাড়ী শ্রমজীবি মানুষ নিজেরাই এখন তৎপর হচ্ছে।

করোনাকালে সরকার কর্তৃক প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন সংগঠন থেকে ও সহযোগিতা করা হয়েছে। আদিবাসীরা ও স্থানীয় আদিবাসীরা কি কি সেবা ও সাহায্য পেয়েছে?

নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তীব্র আক্রমণাত্মক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি পাহাড়ী আদিবাসীদের নিত্য জীবনের ছন্দ পতন, জীবন ও মৃত্যুর স্বন্ধিক্ষণ মার্চ হতে জুলাই মাস পর্যন্ত কর্মহীন ও দুর্বিষহ জীবনের প্রভাব সাংঘাতিকভাবে ক্ষতি করেছে। এ দুসময়ে খাদ্য সরবরাহ রেশন পদ্ধতি এলাকার মানুষের খাদ্য সংস্থান করেছে। ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চিকিৎসক ও পেশাজীবি আদিবাসী পরিবার সরকার কর্তৃক প্রণোদনা পেয়েছে। এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন স্বপ্রনোদিত হয়ে ফ্রি চিকিৎসা ও করোনা পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা, অক্সিজেন সিলিন্ডার জেলা-উপজেলাভিত্তিক সরবরাহ করেছে। করোনা আক্রান্তদের নাপা ট্যাবলেট ও স্যালাইন প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে আদিবাসী পাহাড়ী জনগণ মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে। 

করোনাকালে শিক্ষাব্যবস্থায় স্থবিরতা বিরাজ করছে। কিছু স্থানে অনলাইন ক্লাস অব্যাহত রয়েছে। আপনার এলাকায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের চলমান রাখার জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?

শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে মহামারী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রাদুর্ভাবে সংকটকালে সরকারীভাবে নির্দেশিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, টেকসই সামাজিক সেবাদান প্রকল্প সীমিতভাবে পাড়া কেন্দ্রে পাঠদান, বিশুদ্ধ পানি, সেনিটেশন, মা ও শিশুদের নিয়ে উঠান বৈঠক প্রতি মাসে একবার করছে। এখানে নাচ, গান, স্থানীয় ভাষায় আনন্দ অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, গল্প, ছবি আঁকা, বর্ণমালা ও চারুকলার কাজ করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ চলাকালীন ঘরে বসে পরিবারের শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, ‘‘আমার ঘরে থেকে আমার শিশু শিখবে’’এই প্রেরণায় সকল পরিবারকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অনলাইন শিক্ষার সীমিত সুযোগ হতে পাহাড়ী আদিবাসী জনগোষ্ঠী বঞ্চিত কারণ বিস্তৃর্ণ দূর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় সোলার ব্যবহার আদিবাসী জনগণ সীমিতভাবে ব্যবহার করছে, এর সুবাদে টেলিভিশন ও মোবাইল ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু-কিছু স্থানে স্বল্প পরিসরে টিউশন চালু করে শিশুশিক্ষা কার্যক্রম সক্রিয় ও চলমান রয়েছে। এদিকে শহর অঞ্চলে মধ্যবিত্ত পরিবারে শিশুরা অনলাইন শিক্ষা  কার্যক্রমে কানে ছিপি লাগিয়ে বা ইয়ার প্লাগ ব্যবহারে শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শিশুদের কানের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। পাহাড়ী পরিবার ও অভিভাবকদের বদ্ধমূল ধারণা শিশুশিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে শিশু স্বাস্থের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

মহামারীর এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো সত্যিই মানবীয়।  মূলত পরিবারগুলোকে আপনারা কিভাবে ও কি ধরনের সহায়তা দান করেছেন ?

পাহাড়ী আদিবাসী বর্তমানে তথ্যপ্রবাহের আওতায় এসে গেছে, এতে করে করোনাভাইরাসের মর্মান্তিক বিপর্যয় মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দৈনন্দিন সংবাদ জেনে যাচ্ছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিউজ বুলেটিনের আপডেট এখানের পার্বত্য এলাকায় অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফলশ্রুতিতে, সুস্থ নিরাময় শনাক্ত, আক্রান্ত ও মৃত্যু প্রতিনিয়ত জেনে যাচ্ছে। মফস্বলে বাণীপ্রচার ও পালকীয় কাজে যখন খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করি তখন করোনাভাইরাস হতে নিরাময়ের প্রার্থনা করি হাতে মোমবাতি নিয়ে প্রার্থনা করি, জল আর্শীবাদ করি ও বিপদ ও সংকট মোকাবেলায় শক্তি সাহস ও প্রেরণা দান করি। চট্টগ্রাম আর্চডায়োসিস হতে প্রাপ্ত ও নির্দেশিত আর্থিক সাহায্য ও ত্রাণ বিতরণের কাজ গত জুন মাস হতে পাহাড়ী আদিবাসীদের দেওয়া হচ্ছে।

পাহাড়ী জীবন যাপন সমতলের তুলনায় কঠিন। মূলত তারা কিভাবে এতো কঠিন বাস্তবতার মাঝে সংগ্রাম করে যাচ্ছে ও তাদের অনুপ্রেরণা কি ?

দুঃখে যাদের জীবন গড়া, তাদের আবার দুঃখ কিসের ! টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রকৃতিগতভাবেই নানা পেশায় অংশগ্রহণ করতে হয়। বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপট নিতান্তই পাহাড়কেন্দ্রিক জুমচাষ শস্য ফলানোর পাশাপাশি অনেক নতুন প্রজন্মের আদিবাসী পাহাড়ী অভিবাসী হয়ে গার্মেন্টস কর্মী, বিউটি পার্লার, গাড়ী চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কর্মরত আছে। নোভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্কে শহর হতে চাকুরী ছেড়ে বাড়িতে চলে আসছে, অনেক ক্ষেত্রে চাকুরী ছাটাইয়ের কারণে পাহাড়ে ফিরে এসে দুঃখ কষ্টে জীবন যাপন করছে। প্রচুর আদিবাসী কাজ হারিয়েছে পেশায় পরিবর্তন করতে হয়েছে। ঋণের কিস্তি না দিতে পেরে সঞ্চয় ভাঙ্গতে হয়েছে, অনেকে বাল্যবিবাহ দিয়ে বাঁচতে চেষ্টা করছে। করোনাকালে যে অনুপ্রেরণা পরিবার নিয়ে আয়-রোজগার করার নতুন পথ সন্ধান করা শাকসবজি ফলাহার নষ্ট ও অপচয় না করো কাঁধে করে বাজারে রাস্তায় বসে বিক্রি করে আয় করেছে। বর্তমানে তাদের কাছে বাঁশের তৈরী খাঁচা, টুকরী তৈরী করে জীবন জীবিকার অন্বেষণ করছে, কৃষিকাজে নানা সমস্যা তার মধ্যে পানি দূষণ উঁচু পাহাড় সাপের আক্রমণ, ছরা-ঝিরিতে বালি যা চাষের উপযোগী নয়, প্রসূতি মায়ের নিরাপদ সন্তান প্রসব ও শিশু প্রতিপালন সবই কঠিন তবুও পাহাড় পরিবেশ এদের বন্ধুত্ব আত্মীয় ও অবলম্বন এটাই তাদের সান্ত্বনা ও অনুপ্রেরণা।

পাহাড়ী আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে থাকা ও তাদের সেবা দিতে পেরে আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট ও আপনার অভিজ্ঞাতা কি ?

পাহাড় জঙ্গল বনভূমি ও পাহাড় ছরা-ঝিরি পার হয়ে যখন আদিবাসীদের পাহাড়ে পৌঁছে যাই তখন এদের আতিথেয়তা আপ্যায়ন ও সঙ্গে থাকা খুবই ভাল লাগে, মনের মধ্যে এতটা আনন্দ পাহাড়ীদের পালকীয় সেবা হল ঈশ্বরের আশীর্বাদ। খ্রিস্টযাগ, বাইবেল পাঠ, মা মারীয়ার প্রতি ভক্তি প্রদর্শনার্থে রোজারী মালা ও সাধু সাধ্বীদের পর্ব পালন ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষ সবাই উপাসনায় অংশগ্রহণ করে। খ্রিস্টযাগে বোতল ভর্তি পানি আশীর্বাদ করতে নিয়ে আসে। জুমের উৎপাদিত নতুন চাল জবা ফুল দিয়ে সাজিয়ে নিয়ে আসে, মানত-নিয়ত করে দশমাংশ স্থানীয় গীর্জায় দান করে এবং খাওয়া-দাওয়া শেষে মিশনে ফিরে আসতে কলা, লেবু, জাম্বুরা ও বেল যা পারে ব্যাগ ভর্তি করে দিয়ে দেয়, চাকমাদের মৃত সৎকার তারা পুড়িয়ে ফেলে এতে পরিবারের সাথে নিকট ও দূরবর্তী আত্মীয় সবাই মৃতদেহ দাহ করতে অংশগ্রহণ করে। যাজক হিসাবে ওদের আচার-নুষ্ঠানসহ মৃত ব্যক্তির আশীর্বাদ ধূপ ও পবিত্র জল ছিটিয়ে মশাল বা বম্বা দিয়ে মৃতদেহ দাহ করার লাকড়ী দিয়ে উঁচু রুবোগর বা মঞ্চে প্রথম আগুন জ্বালিয়ে দিতে হয়। এরপরে সবাই হাতেখড়ির মুঠি জ্বালিয়ে দাহ করে। মৃতদেহ দাহ শেষ করে শোবাশাল পাশে পবিত্র ক্রুশ স্থাপন করে খ্রিস্টভক্তের খ্রিস্টসাক্ষ্য বহন করে। পরবর্তীতে কেউ-কেউ ৭ দিন্না, আবার ১৩ দিন্না মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনা করে অনুষ্ঠানে রাখা হয়। এখানে খ্রিস্টযাগে প্রচুর আত্মীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে। এখানে শোকার্ত পরিবারের সাথে অর্থ-কড়ি, দ্রব্য সামগ্রীর চাল, সবজি শুকরের মাংস এনে ক্রিয়ানুষ্ঠান সম্পন্ন করে।

নবান্ন উৎসবে নতুন চাল ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পারিবারিকভাবে ভোজের আয়োজন করে। খ্রিস্টযাগে ঐদিন পাড়াবাসী খ্রিস্টযাগে মিলিত হয়, পরে পরিবারের সবাই একত্রিত হয়ে একসাথে খাওয়া-দাওয়া করে। আমি দরিদ্র আদিবাসীদের জন্য পুরনো কাপড় সংগ্রহ করে ওদের কাছে বিতরণ করি। শিশুরা নুডুলস পছন্দ করে হলুদ পাতা বা কলাপাতায় নুডুলস খেয়ে শিশুরা আনন্দে পাড়া মাতিয়ে রাখে। বিচিত্র ও প্রাণবন্ত পাহাড়ী আদিবাসীদের মধ্যে পালকীয় অভিজ্ঞতা ফেইসবুক ও সাপ্তাহিক প্রতিবেশীতে রিপোর্ট- এর মাধ্যমে সবার জানার সুযোগ হয়। আমার মফস্বলকেন্দ্রিক সামান্য অভিজ্ঞতা যাজকীয় সেবাকাজের অনুপ্রেরণা ও সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করে।

এমন কোন প্রতিবন্ধকতার কথা কি উল্লেখ করতে চান, যা মোকাবেলা করতে সত্যিই বেগ পেতে হয়েছে। আর তা কিভাবে মোকাবেলা করেছেন ?

খাগড়াছড়ি সম্পূর্ণ মফস্বলভিত্তিক বিশাল গীর্জা, ফাদার বাড়ী ও সিস্টার বাড়ীসহ বড় আঙ্গিনা নিয়ে আপার পেরাছড়া কাথলিক মিশন এর ধারে কাছে খ্রিস্টীয় বসতি নেই। শহরে থেকে প্রত্যন্ত এলাকা ও গহীন পার্বত্য এলাকায় ১৪টি পাড়ায় ত্রিপুরা চাকমা ও মারমা পাহাড়ী খ্রিস্টান রয়েছে। পালকীয় পরিকল্পনামাফিক পাহাড়ী সুউচ্চ দূর্গম এলাকায় খ্রিস্টযাগের রুটি, দ্রাক্ষারস, ধর্মীয় প্রার্থনার বই বহন করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। প্রথমবার যখন তন্ন্যামাছড়া চাকমা খ্রিস্টবসতি রওনা হই, তখন উপলব্ধি করেছি পালকীয় প্রতিবন্ধকতা জয় করতে হলে সাহস, ধৈর্য, মনোবল ও ভালবাসার এনার্জী নিয়ে পাহাড়ী রাস্তা দীর্ঘ ছড়া/ঝিরি অতিক্রম করে আবার লাঠি নির্ভর করে খাড়া পাহাড় বেয়ে ৩ ঘন্টা পরে সুনীল চাকমার পাহাড় ভূমিতে পৌঁছে সাধু মার্ক গীর্জায় খ্রিস্টযাগ অর্পণ করে তাদের সাথে খাওয়া-দাওয়া করে ফিরতে সন্ধ্যা নেমে যায়।

যারা পাহাড়ী মূলত কিভাবে আয় করে? তাদের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমগুলো কি কি?

সম্প্রতি পাহাড়ী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কঠোর পরিশ্রম করে বছরে অন্তত দুবার ধানের ফসল পাহাড় জুম চাষ ও নীচু জমিতে ফলায়। দেখা যায় এদের প্রতি ঘরে কম-বেশি অন্নসংস্থান হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকারের ধান, সুগন্ধি ধান ও বিন্নি ধান পাহাড়ীদের ঘরে-ঘরে মজুত থাকে। এখন যান্ত্রিক যুগে কালের প্রবাহে পাহাড়ী চাষীরা পাহাড় নীচ হতে পাওয়ার টিলার, ধান মাড়াই মেশিন, ওয়াটার পাম্প, রাইস মিল ব্যবহার করেছে। উঁচু পার্বত্য জুম চাষে পাহাড়ে নীচ হতে রিং ওয়েল, অটো টিউবওয়েল, গারালী টিউবওয়েল দিয়ে কুয়া ও ছড়া হতে পানি তোলা হয়। এখানে পাহাড়ী চাষীরা সোলার ও ডিজেল চালিত জেনারেটর ব্যবহার করে।

বর্তমানে কৃষিকাজে প্রবল সম্ভাবনা কলা, আম, আনারস, মাল্টা, লেবু, কাঁঠাল, জাম্বুরা, লটকন ইত্যাদি চাষ করে বড় মাপের আয় করছে। এখানে ভেড়া পালন খামার, শুকরের খামার, হাস-মুরগি গরু ছাগলের খামার, মৎস্য পালন গড়ে উঠছে। এদিকে রেশম চাষ, রাবার চাষ ও তাঁতের কাজ পাহাড়ীদের দরিদ্র বিমোচন ও আয়ভিত্তিক কাজ ভালই চলছে। 

মহামারী এই সময়ে আপনার দিক নির্দেশনায় ধর্মপল্লীর খ্রিস্টভক্তদের সাড়া কেমন ছিল?

নোভেল করোনাভাইরাস বিশ্বায়নের এই যুগে দেখিয়ে দিল আমরা যারা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে বাস করছি, এখানে বৈশ্বিক মহামারী রোগ সংক্রমণের প্রাণঘাতী প্রবাহ ঢেউ নির্মমভাবে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র কবলিত এ দেশেও হানা দিয়েছে। গত মার্চ মাস হতে নোভেল করোনাভাইরাস হট টপিক হয়ে খবরের কাগজ, রেডিও, টেলিভিশন, পোস্টার, সাইনবোর্ড ও মোবাইল রিং টোনের মাধ্যমে পাহাড়ী সবাই জেনে গেছে। 

এখানে এলাকাভিত্তিক লকডাউন, সেনিটাইজার, সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার নানা ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আমরা খাগড়াছড়িতে কারিতাস হতে প্রাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দুরত্ব রক্ষা পোস্টার, স্যাভলন সেনিটাইজার ও মাস্ক দূর্গম এলাকায় বিতরণ করেছি। এখানে সবুজ অরণ্য, বিশাল খোলা প্রকৃতি গণবসতি নেই, তাছাড়া মিল ফ্যাক্টরী উপস্থিতি নেই শুধুমাত্র ইটের ভাটা সর্বস্থানে দেখা যাচ্ছে যা বায়ু দূষণ করতে পারে। আমরা প্রার্থনা করছি বৃহত্তর খাগড়াছড়ি জেলা যেন সুস্থ ও নিরাপদে থাকুক।

মহামারীর এই দুসময়ে আপনাদের প্রতিজন কর্মীকে সেবাদানের ক্ষেত্রে কিরূপ ভূমিকা পালন করেছে।

করোনাভাইরাস চলাকালীন প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরে থাকুন, সুস্থ ও নিরাপদে থাকুন বারংবার এই নির্দেশনা দেওয়া ছিল একমাত্র কাজ। পাহাড়ী পাড়ায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা বসতিতে আমাদের পাড়া শিশুশিক্ষা কার্যক্রমের স্থানীয় মাষ্টারগণ সতর্কতামূলক স্বাস্থ্য শিক্ষাদান করেছিল। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতার ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছিল। পাড়ার প্রবেশ পথে বাঁশ দিয়ে বেরিকেড তৈরী করে অপরিচিত মানুষের চলাচল ও গতিবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, যারা পাড়া থেকে একান্ত প্রয়োজনে বের হচ্ছিল, তাদের স্প্রে করে ঘরে প্রবেশ করানো হয়েছিল, সামাজিক দুরত্ব রক্ষা করে গায়ে হাত দেওয়া হতে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। শিশু, যুবক, যুবতী ও প্রবীণ সবাইকে ঘন-ঘন সাবান দিয়ে পরিষ্কার থাকতে বলা হয়েছিল। আমি নিজেই পাড়ায় গিয়ে লেবুর রস দিয়ে গরম পানি পান করতে উদ্বুদ্ধ করেছি, আঙ্গিনা বসত-বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ঘর নির্মাণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলাম।

উপসংহার : মর্মান্তিক বৈশ্বিক করোনাভাইরাস সংক্রান্ত লাগামহীন প্রচারে আমাদের পাহাড়ী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী দেহ, মন ও অন্তরাত্মায় কিংকতর্ব্যবিমূঢ় ও হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল। আমি বিত্তশালী দয়ালু উদার ব্যক্তিদের কাছে কৃতজ্ঞ কারণ আমাদের সুহৃদ বন্ধু কয়েকজন ফোন করে এ দুসময়ে ও সংকটকালে আমরা কিভাবে বসবাস করছি, তার খোঁজ-খবর নিয়েছেন ও আর্থিক সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছেন। পাহাড়ীদের নিত্যদিনের জীবন যাত্রায় ব্যাপকভাবে ছন্দপতন হল, লকডাউন, কারফিউ, দোকান-পাট, পরিবহন কয়েক মাস লাগাতার বন্ধ থাকার কারণে মার্চ মাস হতে জুন মাস পর্যন্ত ঘরে থাকার এই স্বাস্থ্যবিধি পালন ও রক্ষা করতে গিয়ে এরা শেষে হাঁপিয়ে উঠেছে ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে মনে আঘাত পেয়েছে। এ ক্রান্তিকালে বিত্তশালী ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার কারণে পাহাড়ী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী উপকৃত, স্বস্তি ও শান্তি পেয়েছে।

মন্ডলী ও সমাজের কাছে আমার প্রত্যাশা হল পাহাড়ীদের চলমান শিক্ষার সুবিধা, কর্ম ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং উঁচু-উঁচু পাহাড়ে যারা বাস করছে তাদের পানীয় জলের ও সেচের ব্যবস্থা করা যায়। বর্তমান জীবন যাত্রার সাথে খাপ খাওয়ানো ও উন্নতর ভবিষ্যৎ নিরূপনের ক্ষেত্রে অগ্রধিকার ভিত্তিতে সেবামূলক কাজে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও অর্থ বিনিয়োগ করা সময়ের দাবি। কারো প্রতি বিচারের মনোভাব হতে বিরত থেকে তৃণমূল পর্যায়ে পাহাড়ীদের প্রতি দয়া, মায়া-মমতা ও সহানুভূতি সেবাকাজ স্বার্থ ত্যাগ করে অবিরত চলমান গতিশীল রাখাই শ্রেয়। হঠাৎ করে প্রতিবেশী থেকে আমার মত নগণ্য যাজককে সহভাগিতার সুযোগ দানের জন্য কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সবাই সুস্থ ও নিরাপদে থাকুন এ মঙ্গল প্রার্থনা করি।

[জীবন ও সমাজে   পাঠাতে পারেন আপনারও লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 

Post a Comment

Previous Post Next Post