শিশু ধর্ষণ থেমে নেই

জাসিন্তা আরেং : যখন মহামারী করোনার আঘাতে গোটা বিশ্ব ও সমাজ বিপর্যস্ত, সে সময়েও দেশে থেমে নেই শিশু ধর্ষণ। যেন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দিন-দিন বেড়ে চলেছে শিশু ধর্ষণের মত অপরাধের সংখ্যাও। থেমে নেই ধর্ষিত শিশুদের পিতা-মাতার কান্না ও আহাজারি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে শিশুরা ধর্ষিত হচ্ছে যা মোটেই কাম্য নয়। করোনাকালীন সময়েও নোংরা চিন্তাধারার লোকেরা শিশু ধর্ষণের মত অপরাধের নজির রেখে চলেছে। বর্তমান সমাজ শিশুদের কতখানি নিরাপদ শৈশব দিতে সক্ষম হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশুদের ভবিষ্যত নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তার অধিকারও ক্ষুন্ন হচ্ছে। বাড়ন্ত বয়সে ধর্ষণের শিকার হওয়ার যে দুস্বপ্ন তা সারাজীবন কষ্ট ও মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নির্মমভাবে ধর্ষণের ফলে শিশুরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার ফলে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরতে তাদের দীর্ঘসময় অতিবাহিত করতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, শুধুমাত্র ধর্ষণই নয়, ধর্ষণের পরে কিংবা ধর্ষণের আগে শিশুদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে যা অতিশয় পরিতাপের বিষয়। অন্যদিকে দেশে পর্যাপ্ত আইনের বিধান থাকা সত্তে¡ও ধর্ষণকারীরা তাদের কৃতকর্মেও জন্য উপযুক্ত শাস্তি পাচ্ছে না। ধর্ষণকারী আটক হলেও, তারা তাদের নিকৃষ্ট অপরাধের জন্য যথাযথ দণ্ড পাচ্ছে না। প্রভাবশালীরা টাকা-পয়সা ও ক্ষমতার জোরে আইনকে তোয়াক্কা না করে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করার দিব্যি সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে ধর্ষিত শিশুর পিতা-মাতা সঠিক বিচার পাওয়াতো দূরের কথা, ধর্ষণকারীর পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন দ্বারা প্রতিনিয়ত হুমকীর সম্মুখীন হচ্ছে। আবার অনেক পিতা-মাতাই শিশুর জীবন হুমকীর মুখে পড়ার ভয়ে প্রভাবশালী ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে সাহস করছে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধর্ষিতা শিশুর পিতা-মাতা গরীব ও অসহায় হওয়ার কারণে কোন ধরনের আইনি সহায়তা না পেয়ে অসহায় জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও নিরক্ষর হওয়ার ফলে ধর্ষিত শিশুর পিতা-মাতার পক্ষে আদালতের দ্বার পর্যন্ত যাওয়ারও সুযোগ হচ্ছে  না। এদিকে ধর্ষিতার অভিভাবকেরা কোন মানবাধিকার সংস্থা বা শিশু সুরক্ষা সংগঠনগুলোর সহায়তা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় ধর্ষকেরা অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে এবং অন্যদিকে ধর্ষিত শিশু ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব দিকগুলোই সমাজে শিশু ধর্ষণের মত অপরাধগুলোকে বৃদ্ধি পেতে উৎসাহিত করছে।  

 শিশু ধর্ষণ থেমে নেই

শিশু ধর্ষণ জিরো টলেরেন্স করতে হলে সমাজে বসবাসকারী সকলকেই শিশু সুরক্ষার দিকটি বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে। শিশু ধর্ষণের জন্য যে শুধু বখাটে, মদ-গাজাখোর লোকেরাই যে দায়ী তা নয়, এ দায় আমাদের সমাজে বসবাসকারী ভদ্রবেশী কিছু নরপিশাচদেরও। পরিতাপের বিষয় হলো এই যে, বর্তমানে শিশু ধর্ষিত হচ্ছে শিক্ষক, মৌলভী-মাওলানা, বন্ধু-বান্ধব, এবং পাড়া-প্রতিবেশি, এমনকি শিশুর পিতার দ্বারাও।  সম্প্রতিকালে অপরিচতদের তুলনায় পরিচিত মানুষদের দ্বারাই শিশুরা বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। যদি এভাবেই সমাজে বসবাসকারী লোকদের নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটতে থাকে, তবে আগামীতে আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে বিবেচনা করা যায়। কেননা আমাদের আগামী বর্তমান শিশুদের ওপরই নির্ভর করে।

দেশে বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্ন মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন ও সচেতনমূলক প্রোগাম পরিচালনা করা হচ্ছে, তারপরও শিশু ধর্ষণের লাগাম টেনে ধরা এখনো সম্ভব হয়নি। শিশু ধর্ষণের লাগাম টেনে ধরতে শিশুর পিতা-মাতাকে আরো বলিষ্ঠ ভ‚মিকা পালন করতে হবে। শিশু ধর্ষণের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে আপোসহীন মনোভাব পোষণ করাও অত্যন্ত জরুরী। যে কোন ধরনের জরিমানা নেয়া কিংবা লোভের বশবর্তী হয়ে টাকা-পয়সা গ্রহণ থেকেও বাদীপক্ষকে বিরত থাকতে হবে।  যেন কোন অজুহাত ও সুযোগের ব্যবহার করে ধর্ষকেরা এই ঘৃণ্য অপরাধের যোগ্য শাস্তি হতে পরিত্রাণ না পেতে পারে। এছাড়াও শিশু সুরক্ষা ও ধর্ষিত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং ন্যায্য বিচার বিষয়ক মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে আরো তৎপর হতে হবে যেন শহর ও গ্রামাঞ্চলে যেসব শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তারা যেন সহায়তা পেতে পারে। সংগঠনগুলোর আইনি সহায়তা ও শিশু সুরক্ষা বিষয়টি দোর-গোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে কিনা তাও নিশ্চিত করতে আরো উদ্যোগি হতে হবে। আমাদের সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টাই পারে শিশুদের সুন্দর আগামী ও আমাদের ভবিষ্যত আলোকিত করতে। তাই আসুন শিশু ধর্ষণ প্রতিরোধে এগিয়ে আসি ও ধর্ষিত শিশুদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে উৎসাহিত করি।

 লেখিকা : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

[  জীবন ও সমাজে  পাঠাতে পারেন আপনারও লেখা। 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ]

Post a Comment

Previous Post Next Post