স্বপ্ন দেখি বেকার মুক্ত দেশ


স্বপ্ন দেখে, আবার সব স্বপ্ন এক জায়গাতে গিয়ে হোঁচট খায়। দিনশেষে শূন্য পকেট আর জরাজীর্ণ মুরগির খোয়ারের মত বিছানা, সঙ্গীহীন রাত্রিই জুটে কপালে। ডাবল বোনাস হিসেবে আছে পরিবারের কথার যন্ত্রণা আর সমাজের লাঞ্চনা। আর এমনটাই তো হচ্ছে আজকের যুব সমাজে। তরুণদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে বিপুল পরিমানে। তার অন্যতম একটি কারন হচ্ছে বেকারত্ব। উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, নেই চাকরির সুযোগ। এর মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চাকরির বাজারে যোগ্যতা ও দক্ষতা খুবই কম। সনদ অনুযায়ী চাকরি মিলছে না। চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় শিক্ষিত বেকার বেড়েই চলেছে। এ চাপ আবার তৈরি করছে অর্থনীতির উপর। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় অধিক। এটা সত্যিই উদ্বেগজনক। প্রতিবছর উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শ্রম বাজারে আসা শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেক বেকার থাকছেন অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনের পর দিন। স্বল্প শিক্ষিতের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষিত কর্মহীনের সংখ্যাও বাড়ছে। সেই সঙ্গে ছোট হয়ে আসছে কর্মসংস্থানের পরিধি। অবস্থা এখন এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে ইঞ্জিনিয়ারিং ও এমবিবিএস এর মতো সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে অনেক উচ্চ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী ঘুরছেন বেকারত্ব নিয়ে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ‘ডিসেন্ট ওয়ার্ক ডিকেড: এশিয়া, প্যাসিফিক অ্যান্ড দ্য আরব স্টেট’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জনসংখ্যার মধ্যে এ ধরনের তরুণদের হারের দিক দিয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২১ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় খারাপ অবস্থানে আছে। কোটি মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে অমানবিক জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। মূল কারণ সমূহ হচ্ছে শ্রমিকের অদক্ষতা, সুষ্ঠ পরিকল্পনার অভাব, শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের অভাব, আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব, যুগোপযোগী কারিগরি জ্ঞানের অভাব, কৃষি, মৎস্য, পশুপালন ও পোল্ট্রির মত লাভজনক খাতে শিক্ষিত লোকের কাজে অনীহা। তাদের সংখ্যা বাড়লেও চাকরির সুযোগ বাড়ছে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে শিল্প-কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি বা সম্প্রসারণ ঘটছে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টির সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি খাতে বরাদ্দের অভাব পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।   

স্বপ্ন দেখি বেকার মুক্ত দেশ



এটা স্বীকার করতে হয় যে সরকার বসে নেই। সরকার দেশে ইপিজেডের পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ সন্দেহ নাই। বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্যই প্রয়োজন। তারপরও বেকার সমস্যাকে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মনে করে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে একে মোকাবেলা করতে হবে। এই দেশকে বেকারত্বের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে বেসরকারি খাতে অধিক হারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post