আদিবাসী নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক

 আদিবাসী নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক


বাংলাদেশের আদিবাসী নারী এবং নারী হিসেবে অধিকার সচেতন ও প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক। কেননা এদেশে বসবাসরত আদিবাসী গোষ্ঠিদের বেশিরভাগই নিজ অধিকার সম্বন্ধে অসচেতন। বিশেষ করে পাহাড় কিংবা দুর্গম এলাকায় বসবাসরত আদিবাসী নারীদের অধিকার সুরক্ষা, লিঙ্গ সমতা এবং অধিকার সম্পর্কে সীমিত জ্ঞান রয়েছে। যার ফলে সমাজে অন্যান্য নারীদের মত আদিবাসী নারীরা সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। বঞ্চিত হচ্ছে নারী হিসেবে প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে জীবন যাপন করা থেকে। দুর্গম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসের ফলে তারা যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি অবহেলিত আধুনিক সমাজেও। অন্যদিকে, আদিবাসী নারীরা জীবনের পদে-পদে লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আদিবাসী নারীরা রাস্তাঘাটে-শহরে-গ্রামে, দেশে-প্রবাসে, প্রতিনিয়তই কটুক্তি, ব্যঙ্গ, অবহেলা, প্রতারণা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হচ্ছে যা তাদের অধিকারকেই রীতিমত খর্ব করছে। এটাও লক্ষ্যণীয় যে, আদিবাসী নারীরা নির্যাতিত হবার পরও অনেকেই চক্ষুলজ্জার ভয়ে নীরব থেকে নির্লিপ্ততার পরিচয় দিচ্ছে। আবার এদিকে, নির্যাতিত, অবহেলিত আদিবাসী নারীরা অভিযোগ করেও সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছে না। বিগত কয়েক বছরে আদিবাসী নারী ধর্ষণ বা খুনের সুষ্ঠু বিচার এবং নির্যাতনকারীর যোগ্য শাস্তি কার্যকর হয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়াটাও জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

নারী হিসেবে আদিবাসী নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক


অন্যদিকে, এ যুগেও কিছু সংখ্যক আদিবাসী নারী বিশ্বায়নের সংস্কৃতি থেকে দূরে অবস্থান করছে। যার ফলে তারা বিভিন্ন বিষয়ে অসচেতন, নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠায় তুলনামূলক কম সক্ষম এবং সমাজে অরক্ষিত। প্রসঙ্গতই আদিবাসী নারীরা সরকারি চাকুরী করা, জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখা এবং ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গের সাথে সংশ্লিষ্টতা রক্ষায় উদাসীন এবং অনাগ্রহী। এসব কারণই আদিবাসী নারীদের পিছিয়ে থাকার নেপথ্যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তাই ক্রমবর্ধমান শিক্ষিত ও উচ্চশিক্ষিত নারীদের আর্থ-সামাজিক প্ল্যাটফর্মে অবদান রাখতে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন নারী হিসেবে আদিবাসী নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন আদিবাসী নারীর অধিকার সুরক্ষা ও প্রতিষ্ঠায় প্রেরণা হোক এবং নারীজাতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মানসিকতা সকলের মাঝে গড়ে ওঠুক। সর্বোপরি, একজন নারী হিসেবে প্রত্যেক আদিবাসী নারীর মর্যাদা প্রাপ্তিতে ধর্ম-বর্ণ নিবিশেষে সকলের পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ অবদান প্রত্যাশিত।   

জাসিন্তা আরেং
প্রকাশ : সাপ্তাহিক প্রতিবেশী
সংখ্যা:০৯, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ




Post a Comment

Previous Post Next Post