ই-পাসপোর্ট ॥ স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেক ধাপ



ই-পাসপোর্ট ॥ স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেক ধাপ

অবিশ^াস্য হলেও সত্য যে, দশ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট বা ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট এর উদ্বোধন হয়ে গেল। বাংলাদেশের লাখো মানুষের বহুল কাঙ্খিত একটি আশা। আর এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রীর সব স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২০০৮ সালে আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে ডিজিটাইজ। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো লেগলেও আজ এর সুফল সবাই পাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘ই-পাসপোর্ট চালু হলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সম্মান বাড়বে। ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে মেশিনে একজন ব্যক্তির প্রকৃত তথ্য মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে যাচাইয়ের সুবিধা রয়েছে।’  
ই-পাসপোর্ট ॥ স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেক ধাপ


সাধারণ পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্টের পার্থক্য হলো, এতে মোবাইল ফোনের সিমের মতো ছোট ও পাতলা আকারের ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ যুক্ত থাকবে। এই চিপ পাসপোর্টের একটি বিশেষ পাতার ভেতরে থাকবে। এই পাতা সাধারণ পাতার চেয়ে মোটা হবে। চিপে সংরক্ষিত বায়োমেট্রিক তথ্য বিশ্লেষণ করে পাসপোর্ট বহনকারীর পরিচয় শনাক্ত করা যাবে। এতে করে একজনের নামপরিচয় দিয়ে অন্য নামে পাসপোর্ট কেউ করতে পারবে না। এই পাসপোর্ট নকল হওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না। সাধারণ পাসপোর্টের তুলনায় ই-পাসপোর্টে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যও থাকছে বেশি। এতে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে, যার অনেক বৈশিষ্ট্য থাকবে লুকানো অবস্থায়। ই-পাসপোর্ট করার সময় মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) ডেটাবেইসে পাওয়া তথ্যগুলো ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। সাধারণ পাসপোর্টের মতো ই-পাসপোর্টের আবেদনও অনলাইনে পাওয়া যাবে। চাইলে পিডিএফ ফরম ডাইনলোড করে হাতেও পূরণ করা যাবে। ফরম পূরণের সময় ছবি ও সত্যায়ন করা লাগবে না। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবেদনপত্র গ্রহণের সময় আবেদনকারীর ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি নেওয়া হবে। সেই সব তথ্য চিপে যুক্ত হবে। ইমিগ্রেশন পুলিশ বিশেষ যন্ত্রের সামনে পাসপোর্টের পাতাটি ধরতেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

ই-পাসপোর্ট বা ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট হলো  একটি   বায়োমেট্রিক  পাসপোর্ট যাতে একটি ইলেকট্রনিক চিপ রয়েছে। ইলেকট্রনিক চিপের মধ্যে রয়েছে বায়মেট্রিক তথ্য যা পাসপোর্টধারীর পরিচয় প্রমাণের জন্যে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ই-পাসপোর্টে ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও চোখের মনির বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। ই-পাসপোর্টে মোট ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। আন্তর্জাতিক চলাচলের ক্ষেত্রে অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ভ্রমণকে আরও সহজ, ঝামেলামুক্ত ও সময় সাশ্রয়ী করবে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট । ই-পাসপোর্ট বর্তমানের বই আকারে পাসপোর্ট যেমন আছে তেমনই। শুধু পাসপোর্টের পাতার শুরুতে ব্যক্তির তথ্য নিয়ে যে দুই পাতা আছে তা থাকবে না। ব্যক্তির তথ্য পাসপোর্টেই পলিমারের তৈরি একটি চিপের মধ্যে সংরক্ষিত থাকবে। আর প্রযুক্তিগত ভাবে গজচ পাসপোর্টের সাথে ই-পাসপোর্টের প্রার্থক্য আছে। এতে আছে শনাক্তকরণ চিহ্ন, স্মার্টকার্ড প্রযুক্তির মতো মাইক্রোপ্রসেসর চিপ এবং অ্যান্টেনা। ই-পাসপোর্টের প্রতিটি পাতায় খুব সূক্ষ্ম ডিজাইনের জটিল সব জলছাপ থাকে। এই পাসপোর্টের মেয়াদ হবে বয়স ভেদে ৫ ও ১০ বছর। বর্তমানে ই-পাসপোর্টে কাগজপত্র সত্যায়নের ঘর উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি কোন আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের কম হয় তবে সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট পেতে জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি) জমা দিতে হবে এবং ১৮ বছর বয়সের নিচে সকল আবেদনকারীকে শুধুমাত্র ৫ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হবে। ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে ‘পাবলিক কি ডাইরেকটরি’তে (চকউ)। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও) এই তথ্য ভান্ডার পরিচালনা করে। ই-পাসপোর্ট স্ক্যান করলে ব্যক্তি পরিচয়সহ অন্যান্য তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই হয়ে যায়। এই জন্যে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার মুখোমুখি হতে হবে না। যাঁদের হাতে ই-পাসপোর্ট থাকবে, দেশের প্রতিটি বিমান ও স্থলবন্দরের স্বয়ংক্রিয় ই-গেট দিয়ে সীমান্ত পার হতে পারবে। তবে যাঁদের হাতে এমআরপি পাসপোর্ট থাকবে, তাঁদের ইমিগ্রেশনের কাজ বিদ্যমান পদ্ধতিতে চলমান থাকবে। ই-পাসপোর্টের বাহক কোনো দেশের দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবেদনকারীর তথ্যের সঙ্গে চকউ তে সংরক্ষিত তথ্য যাচাই করে নেবে। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ চকউ তথ্যভান্ডারে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারে। এর প্রধান প্রধান সুবিধার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ই-পাসপোর্টের তথ্য চুরি বা নকল করা এবং তা কাজে লাগানো প্রায় অসম্ভব; ই-পাসপোর্ট দিয়ে ইমিগ্রেশন পার হওয়া অপেক্ষাকৃত অনেক সহজ;সব তথ্য, স্বাক্ষর, ছবি, চোখের কর্নিয়া ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সুরক্ষিত থাকার কারণে তা জাল করা সম্ভব হয় না; বর্ডার পার হওয়ার সময় যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত হচ্ছে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে; এয়ারপোর্ট বা বর্ডার পার হওয়ার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পরিচয় নির্ণয় হচ্ছে; ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সহজেই তথ্য যাচাই করতে পারবে; দূতাবাসে ভিসার আবেদন করলে দূতাবাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে; বিমানবন্দর বা ইমিগ্রেশন পোর্ট সব জায়গাতেই ই-গেট থাকবে এবং পাশাপাশি প্রচলিত ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাও থাকবে। তাই ই-গেট না থাকলেও প্রচলিত ইমিগ্রেশন পদ্ধতিতে সবাই যাতায়াত করতে পারবে। এছাড়া ই-পাসপোর্টে এমআরপি পাসপোর্টের মতো প্রথমে তথ্য সংবলিত দুইটি পাতা না থাকলেও সেখানে পাসপোর্ট বাহকের নাম, নম্বর, জন্ম তারিখ ইত্যাদি তথ্য থাকবে। তাই ই-পাসপোর্ট দিয়েও প্রচলিত পদ্ধতিতে ইমিগ্রেশন পার হওয়া যাবে। জেনে রাখা ভাল, ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখনের এমআরপি পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাবে না। তবে কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাঁকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। আর ই-পাসপোর্ট চালু হবার পর নতুন পাসপোর্ট করতে চাইলে গজচ এর বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে। এমআরপি ডাটা বেইসে যেসব তথ্য আছে তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে।

একটি ই-পাসপোর্ট হবে ৪৮ পাতার, অন্যটি ৬৪ পাতার। পাঁচ বছর ও দশ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হারে ফি জমা দিতে হবে। মান তিন ধরনের। ‘অতি জরুরি’, ‘জরুরি’ ও ‘সাধারণ’। এরমধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘অতি জরুরি’ ৪৮ পাতার ই-পাসপোর্ট মাত্র দুই দিনে পেতে চাইলে ফি জমা দিতে হবে ৭ হাজার পাঁচশ টাকা। ৪৮ পাতার ‘জরুরি পাসপোর্ট’ পেতে সময় লাগবে সাত দিন। এর জন্য ফি জমা দিতে হবে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। ৪৮ পাতার ‘সাধারণ ই-পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে ফি জমা দিতে হবে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যদিকে, ৪৮ পাতার ১০ বছর মেয়াদি ‘সাধারণ ই-পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে ফি লাগবে ৫ হাজার টাকা। সাত দিনে ‘জরুরি’ মানের ১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পাতার ই-পাসপোর্ট পেতে ফি লাগবে সাত হাজার টাকা। আর মাত্র দুই দিনে ‘অতি জরুরি’ মানের ৪৮ পাতার ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট পেতে ফি জমা দিতে হবে ৯ হাজার টাকা।

পাঁচ বছর মেয়াদি ৬৪ পাতার ‘সাধারণ ই-পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে ফি লাগবে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। সাত দিনে ‘জরুরি ই-পাসপোর্ট’ পেতে ফি জমা দিতে হবে সাত হাজার ৫০০ টাকা। দুই দিনে ‘অতি জরুরি ই-পাসপোর্ট’ পেতে ফি জমা দিতে হবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। একইসঙ্গে ১৫ দিনে ৬৪ পাতার ১০ বছর মেয়াদি ‘সাধারণ ই-পাসপোর্ট’ পেতে ফি জমা দিতে হবে ৭ হাজার টাকা। সাত দিনে ১০ বছর মেয়াদি ৬৪ পাতার ‘জরুরি ই-পাসপোর্ট’ পেতে ফি জমা দিতে হবে ৯ হাজার টাকা। মাত্র ২ দিনে ‘অতি জরুরি’ মানের ৬৪ পাতার ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট পেতে ফি জমা দিতে হবে ১২ হাজার টাকা। এই ফি’র সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট জমা দিতে হবে।

লেখক,  জ্যাষ্টিন গোমেজ














1 Comments

  1. How to make money from betting on football - Work Tomake Money
    If you're kadangpintar having problems finding worrione.com a winning wooricasinos.info bet online for the day of your choosing, then there are plenty of opportunities goyangfc available right here. หารายได้เสริม

    ReplyDelete
Previous Post Next Post