দেহ ব্যবসায়িদেরও জীবনের মূল্য আছে

দেহ ব্যবসায়ি হলেও তাদের রয়েছে মৌল মানবিক চাহিদা। তাই তো শেষ বয়সে কর্মসংস্থান চান যৌনপল্লীতে বসবাসরত বার্ধক্যের দোঁড়গোড়ায় পা রাখা সব যৌনকর্মীই। বয়সের একটা সময় যখন শরীরের চাহিদা থাকে না তখন অন্তত খেয়ে পরে যেনো বাঁচতে পারেন সেই আকাঙ্ক্ষা সবার। কিন্তু মানুষ যা ভাবে তা কি আর হয়! 



তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে পদে পদে লাঞ্চিত হতে হচ্ছে। উপেক্ষিত হতে হচ্ছে, নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। নাম-ঠিকানা ও পরিচয়হীন যৌনকর্মীদের সন্তানরাও পরিচয়হীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর এ কারণে তারা নাগরিক হিসেবে কোনো সুবিধাই পায় না। যা খুবই অমানবিক। দালালের হাত ধরে শুরু যে জীবন, ফাঁদে পড়ে এভাবেই জীবনসংগ্রামের সম্মুখে তারা।

এদের জীবনে যেমন নেই ন্যূনতম মৌলিক সুবিধা, সামাজিক স্বীকৃতি, তেমনি নেই শিক্ষার আলো। এমনকি মারা যাওয়ার পর নেই জানাযা পাওয়ারও নিশ্চয়তা। অনেকেই একটা নির্দিষ্ট সময় পরে এই যৌনপল্লীর অন্ধকার গহ্বর থেকে বের হতে পারলেও বেশিরভাগকেই কাটাতে হয় দুর্বিষহ অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন। কেউ কেউ আবার নিজেদের দুঃখ ভোলার জন্য বুদ হয়ে থাকছেন মাদকে। যৌবন শেষে যখন শারীরিক সক্ষমতা থাকছে না, তখন ‘খদ্দের’ও থাকছে না। ফলে অর্থের অভাবে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের। সারাক্ষণ মাদক, উচ্ছেদ আতঙ্ক আর ক্ষমতাশীলদের দাপটে তটস্থ থাকতে থাকতেই নিভে যাচ্ছে তাদের জীবন প্রদীপ। 

সরকারিভাবে তাদের জন্য সামান্য কিছু স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা থাকলেও ভাসমান এই জনগোষ্ঠীর জন্য নেই স্থায়ী কোনো আবাসনের ব্যবস্থা। বেসরকারি কয়েকটি এনজিও এই যৌনকর্মীদের জন্য উন্নয়নমূলক কিছু কাজ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত। মূলধারায় ফিরিয়ে না আনা গেলেও অন্তত: যেনো খেয়ে-পড়ে, স্থায়ী একটা ঠিকানায় জীবন কাটাতে পারে এর জন্য সরকারের কাছে আবেদন সমাজের এই অবহেলিত জনগোষ্ঠীর। শেষ বয়সে যখন শরীরের চাহিদা থাকে না তখন অন্তত খেয়ে পরে বাঁচার আকাঙ্ক্ষা তাদের। কিন্তু স্বপ্ন তাদের বাস্তব হয় না, উপরন্তু শেষ হয় যৌবন।


Post a Comment

Previous Post Next Post