জেনিফার গোমেজ : আমাদের এবারেরে আয়োজন, কুলিয়ারচর কিশোরগঞ্জের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাঈদা খানম মুক্তা। তিনি লেখা-লেখির কাজে বেশি সম্পৃক্ত থাকায় লেখিকা হিসেবে তার একটি বিশাল পরিচিতিও রয়েছে। তারপর তার নিজের প্রকাশনা, আবৃত্তি চর্চা ঘর-সংসার এতো কিছু ছাপিয়েও আদর্শিক রাজনীতি চর্চা করছেন অকুতোভয়ে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো আদর্শের পথে চলতে চান, নারীদের সুস্থানে দেখতে চান, সৃষ্টিকর্তা যে স্থানে নারীদের রেখেছেন সেই স্থান নারীদের তিনি দেখাতে চান ও সহায়তাদানে প্রতীজ্ঞাবদ্ধ। বাঙালি সমাজে নারীদের অবস্থান ও মর্যাদাদানের যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন, তা তিনি তার রাজনৈতিক কাজ ও সম্পৃক্ততার দ্বারা বাস্তবায়ন করতে চান। এছাড়াও, দেশকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করতে সবাই সোচ্চার, এরই সাথে অধিকার নিয়ে আরও সোচ্চার হতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সাঈদা খানম মুক্তা |
বর্তমানে ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে। এই অবস্থানে আসতে নিশ্চয় লড়াই করতে হয়েছে। নিশ্চয় কম-বেশি চড়াই-উৎড়ায়ের মধ্যদিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছেন। সেবিষয়ে তিনি বলেন- ‘যে কোনোকিছুর পেছনেই শ্রম রয়েছে। মেধা থাকতে মনন তৈরি করতে হয়, সমাজকে দিতে হবে স্বীকৃতি। আমার এ অবস্থানে আসার জন্য পূর্বেই অনেকে তৈরি ছিলো। কিন্তু আমার ঐকান্তিক ইচ্ছে, পরিশ্রম, মনোবল, ও সবার সহযোগিতায় রূপান্তর আজকের ভাইস-চেয়ারম্যান পদটি। হয়তো অনেকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি, কেউ-কেউ সাদরে গ্রহণ করেছে। আসলে এমনই তো হয়। নদীর একপাশ ভাঙ্গে তো, আরেকপাশ গড়ে।
রাজনীতিতে কিভাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। কাদের অবদান স্বীকার করতে চান।
কৈশোর থেকেই আমার আলাদা ভাবনা ছিলো। ভাবতাম যে পেশায় যাই না কেন? একদিন দেশের কিছু হবো। আমার যাওয়ার পথে বড় সিগন্যাল থাকবে। ফ্রি রাস্তায় চলে যাবো গন্তব্যে। বড় হতে-হতে ভাবলাম, না এতে তো সমস্যা বুঝবো না, এই সিগন্যালে বসে থাকবো জনগণের দুর্ভোগ বোঝার চেষ্টা করবো। এসব ছিলো অল্পবয়সের ভাবনা। বর্তমান অবস্থানে আসার কারণ হচ্ছে নারীদের নিয়ে আমি কাজ করি। "বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটি " নামক একটি সংগঠন রয়েছে। সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি এখানে সব লেখক সুবিধাবঞ্চিত নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করে। কাজ করতে গিয়ে অনুভব করলাম যে, তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করলে অভিজ্ঞতা বাড়বে আর এর জন্য যে কোনো প্ল্যাটফর্ম দরকার। আমার শ্রদ্ধেয় চাচাশ্বশুর এহসানুল হক এর কাছে ইচ্ছে প্রকাশ করলাম। পরবর্তীতে শুরুও করে দিলাম এলাকার কাজ যা আগেও করতাম। পুরো গ্রাম, উপজেলার সবাই আমাকে সমর্থন করে, প্রচুর পরিশ্রম করেছেন বড় থেকে ছোট সবাই। তাদের মধ্যে আজ অনেকেই নেই। তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আল্লাহ তাদের বেহেশত নসীব করুন। প্রকৃতপক্ষে, সবার ভালোবাসায় আজ আমি এ অবস্থানে। আমি কাজ করতে চাই এবং সফল হতে চাই। সফল হতে হলে অনেক বুঝে-শুনে কাজ করতে হয় এবং সেক্ষেত্রে অনেকের সহযোগিতা ও দোয়ারও প্রয়োজন।
আওয়ামীলীগ এমন একটি দল যে আমার এ কাজের জন্য আলাদাভাবে আগে থেকেই খুব সোচ্চার ভূমিকা পালনে তৎপর। আমি সেই নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চাই। দেশ সেবা মানে কি? সুবিধাবঞ্চিত যে কোনো স্তরের মানুষ নিয়ে কাজ করা বা সহযোগিতা করাই হচ্ছে দেশ সেবা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ স্বপ্ন দেখেন। তিনি সফল হচ্ছেন। দেশ এখন অনেক উন্নত। তৃণমূলে কাজ করতে গিয়ে অনেক দেখছি ও জানছি। জানার পরিধি বেড়েছে। এসব বিষয়ে এগিয়ে যেতে আমার স্বামী অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।
রাজনৈতিক জীবনের সুখকর ও দুঃখকর একটি ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন যে, যা চেয়ে পাই, তাতে সুখ অনুভব করি। যা পাই না, তা নিয়ে দুঃখ অনুভব করি। মানুষের সব চাওয়া তো পূর্ণ হয় না। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা নিয়ে আমি খুব ভাবনা নয়; কষ্ট পাই। বেশিরভাগ সময় নারী বলে পিছিয়ে রাখা হয়। এরচেয়ে বেশি বলা মনে হয় সমীচীন নয়। ভবিষ্যত ভাবনা কি। সামনে আরো কি কি করতে চান। এর চেয়ে আরো অবস্থানে যেতে পারলে কি করবেন। একটা স্থানে মানুষ পৌঁছে গেলে স্বপ্নের পরিধি বাড়ে, দায়বদ্ধতা বাড়ে,। আমারও স্বপ্ন অনেক বড় হবো। নিশ্চয়ই এখন বলবেন, আর কত বড় হবেন, অনেক বড় (বয়স) তো হলো। আমি বলবো, মাত্র তো শুরু হলো। কর্মক্ষেত্রের বয়স এখন মাত্র কিশোরী। বড় হবো, নারী উন্নয়ন ও অধিকার নিয়ে কাজ করবো, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করবো। যারা সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত, আমার ধারণা তাদের দ্বারা সমাজের খারাপ কোনো কাজ হবে না। তারা খারাপ করতে পারে না, তারা কারো ক্ষতি চাইতে পারে না। আমাদের মতো মানুষ কাজ করতে পছন্দ করে, উন্নয়ন করে শান্তি পায়, কাউকে সহযোগিতা করে স্বস্তি পায়। তেমনি আমি সুন্দর এতটা প্ল্যাটফর্ম চাই, যেখানে বসে দেশ সেবা করতে পারি! দেশ সেবা মানে কি? আমি আগেই বলেছি। যেমন আমরা সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পাই সবার ভেতরে। ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নারী উন্নয়নের, দেশের জন্য সুন্দর একটি প্ল্যাটফর্ম চাই। স্বপ্নরা বড্ড লোভী। অনেক কিছু হতে চাই "যা হলে আমি যে কাজের সাথে সম্পৃক্ত, সেগুলো করতে আর্থিক সমস্যায় না পড়তে হয়। নারীরাও কাজ করবে যোগ্যতা অনুযায়ী। আমার সংগঠন সেই ব্যবস্থা করে দেয়। এটি আরো বেগবান হোক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সহযোগিতা করুক সেটিই এখন স্বপ্ন। একজন রাজনৈতিকের কাজই হলো রাজনৈতিক শিষ্টাচার বাজায় রাখা ও দেশের সংস্কৃতির চর্চা করা ও গণতান্ত্রিকতা রক্ষা করা। এগুলো করতে আপনার ভূমিকাগুলো কি কি হতে পারে। এগুলো আগেই বলেছি। এরপরও বলি, রাজনৈতিকভাবে একটি সুন্দর অবস্থান যা আমার সম্পৃক্ত কাজকে আরো সহজ করে তুলবে। সমাজের বিত্তবানরা শুধু টাকা দিয়ে নয় এসব সংগঠনের কাজগুলো যাচাই ও জরীপ করে মূল্যায়ণ করুক। স্বপ্ন দেখি আমার হাতেও মজবুত একটি ক্ষমতা আসুক। নারী নয়, মানুষ যে অঙ্গনে কাজ করুক না কেন? তার সঠিক সম্মানটুকু মুখে না দিয়ে কার্যত দেখাক। নারীকে তার যোগ্য সম্মানটুকু দেয়া হোক। এক্ষেত্রে যে পুরুষের বিরুদ্ধে বলবো তা নয়, নারীদেরকেও বলবো আরেকজন নারীকে সম্মান করুন, তার কাজকে সম্মান করুন, একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীকে এগিয়ে যেতে দিন, এতে আপনার জায়গা নড়বড়ে হবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে দেখে কিছু শিখুন। মুখে কম বলে কাজে দেখিয়ে দেন। ধন্যবাদ, আপনাকে। আরো অনেক কথা বলার আছে। অন্য সময় বলবো। তবে শেষে আবারও বলবো, মুখে নয়, নারীকে সম্মান করুন বাস্তবে। নারীর কাজে প্রশংসা করুন, ভুল হলে কটাক্ষ না করে শুধরে দিন।
পরিশেষে বলা যায়, নারী ও শিশু হিতৈষী এবং দেশবাসীদের সেবার্থে এমন রাজনীতিকের জুড়ি মেলা ভার। মিসেস সাঈদা খানম মুক্তা নিষ্ঠা ও দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে নারী ও শিশুরা খুঁজে পাচ্ছে বেঁচে থাকার নতুন আশা। দেশবাসীর মঙ্গলার্থে নিয়োজিত ও মননশীল একজন ব্যক্তিত্ব তিনি। তার মঙ্গল হোক এবং তার মধ্যদিয়ে লাখো মানুষের মঙ্গল ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাক।